বেতন বৈষম্য নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রধান শিক্ষকরা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের পর সৃষ্ট বেতন বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2017, 10:53 AM
Updated : 10 April 2017, 10:53 AM

সোমবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা এই দাবি জানান।

পরে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল সমস্যা বোঝা। সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। সমাধান আজই পাচ্ছেন না। আমরা এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। এটার জন্য একটা কমিটিও আছে। আমি সেই কমিটিতে আছি। আপনাদের মন্ত্রীও সেই কমিটিতে আছেন। আমরা এই বিষয়টা সেখানে বিবেচনা করবো।”

সভায় প্রাথমিক শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরলেও শেষ পর্যন্ত কেবল টাইম স্কেলের দাবিতে নেমে আসেন তারা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সমিতির নির্বাহী সভাপতি ওয়েছ আহমেদ চৌধুরী ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করেন।

যেখানে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩ শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীতকরণপূর্বক তাদের বেতন স্কেল ১১ নম্বর গ্রেড ও ১২ নম্বর গ্রেডে উন্নীত করা হল। একই সাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকগণের বেতন স্কেল যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ নম্বর গ্রেডে উন্নীত করা হল।

ওয়েছ আহমেদ বলেন, একই বছরের ২৭ নভেম্বরের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অন্য একটি চিঠির ফলে আমরা পূর্বের ওই চিঠির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এরপর থেকেই জটিলতা শুরু। নতুন বেতন স্কেলেও তা সমাধান করা হয়নি। সুতরাং নতুন বেতন স্কেলে জ্যেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকদের এতদিনের সিনিয়রিটি বা চাকুরিকালের টাইম স্কেল যুক্ত করে বেতন নির্ধারণ করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

সভায় কেস স্টাডি হিসাবে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দুই শিক্ষকের বেতন কাঠামো উপস্থাপন করা হয়। যেখানে প্রজেশ চন্দ্র দাস ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ১৯৭৫ টাকা বেতন স্কেলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে মো. ছয়ফুল ইসলাম একই বছর ৬ এপ্রিল ১৮৭৫ টাকা বেতন স্কেলে সহকারি শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছেন।

“২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক ১১ তম গ্রেডে এবং সহকারি শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে পৌছেন। অষ্টম বেতন কাঠামো কার‌্যকরের পর প্রধান শিক্ষকের বেতনে টাইম স্কেল যুক্ত হয়নি। অন্যদিকে সহকারি শিক্ষকের বেতনে যুক্ত করা হয় তিনটি টাইম স্কেল, যা যুক্ত করে তার বেতন চূড়ান্ত করা হয়। যেখানে উভয়ের বেতন ১৫ হাজার ৯৮০ টাকা হয়ে যায়।”

বৈষম্যের চিত্র হিসাবে সভায় অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা বিবরণীতে বলা হয়, সরকারী শিক্ষকের তুলনায় প্রধান শিক্ষক এক ধাপ উপরের স্কেলে নিয়োগ পেলেও ১৫ বছর পর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল ও মূল বেতন সমান। সরকারি শিক্ষকের তুনায় প্রধান শিক্ষক পদ ২০০৬ সালে দুই ধাপ এবং ২০১৪ সালে তিন ধাপ উপরের স্কেলে উন্নীত হলেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন নেই। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকদের উন্নীত বেতনে টাইম স্কেল যুক্ত করে নির্ধারণ না করায় প্রধান শিক্ষকগণ এই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

এই বিবরণীর ব্যাখ্যায় সমিতির মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি মঞ্জুলাল দে বলেন, প্রধান শিক্ষকদেরকে টাইম স্কেল দেয়া হলে তারা এখন ৮ নম্বর গ্রেডে চলে যেত।

সমিতির যুগ্ম সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে আমাদেরকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা অনুসারে গেজেট হয়নি। রেট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট দিয়ে সেই গেজেট হলেও এই সমস্যা থাকে না।”

সভায় সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল আউয়াল তালুকদার বলেন, এই বৈষম্যের ফলে অনেক স্থানে প্রকৃত বেতন ও স্কেল উভয় দিক থেকে সহকারি শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকদের উপরে চলে গেছেন।

সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, অর্থ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষকদের পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সমিতির নির্বাহী সভাপতি ওয়েছ আহমেদ চৌধুরী, মহাসম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।