নিরাপত্তা নিয়ে ‘শঙ্কিত’ নন আইপিইউ প্রতিনিধিরা

নিরাপত্তায় কড়াকড়ি থাকলেও ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে অংশ নেওয়া কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা বলছেন তাদের মধ্যে কোনো শঙ্কা কাজ করছে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2017, 02:49 PM
Updated : 2 April 2017, 02:49 PM

অনেকেই নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া বিভিন্ন শপিং মলে গিয়ে কেনাকাটা কথাও কথাও বলেছেন।

রোববার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়াসহ কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা ইস্যুতে বিদেশি অতিথিদের মনোভাবের তথ্য সাংবাদিকদের জানান।

ফজলে রাব্বি বলেন, “আমাকে একটি দেশের প্রতিনিধি জানিয়েছেন তাদের কাছে একটি মিস ইনফরমেশন ছিল যে আমাদেরকে একা একা কোথাও যেতে দেওয়া যাবে না। একজন ভদ্রমহিলা তো অনেক কাপড় কিনে ঘুরে এসে বলেছেন ‘ইউর ঢাকা সিটি ইন ভেরি গুর সিকিউরিটি সিস্টেম। আই ফিল প্রাউড ফর দিস।”

সম্মেলনের বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সম্মেলন উপলক্ষে পুরো সংসদ ভবন এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। পুরো সম্মেলন কেন্দ্র ঘিরে কড়া পাহারায় রয়েছে পুলিশ। 

সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে একপাশের রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রাস্তা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হলেও রিকশা চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

শনিবার সম্মেলনের উদ্বোধনের সময় মানিক মিয়া এভিনিউসহ আশপাশের কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় নাগরিকদের।

৫ এপ্রিল এই সম্মেলন শেষ হওয়া পর্যন্ত সংসদ এলাকায় কোনো দর্শনার্থী ঢুকতে পারছেন না।

এই সম্মেলন ঘিরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগমন ও বহির্গমন হলে দর্শনার্থীদের প্রবেশ আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সম্মেলন স্থল থেকে হোটেল পর্যন্ত অতিথিদের যাতায়াতের জন্য শাটল বাসও চলছে পুলিশ প্রহরায়।

জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল জানান, কয়েকটি দেশের তাদের পরিচিত প্রতিনিধির সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যুতে কথা হয়েছে। ওই প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সম্মেলনে যোগদানের আগে বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে সতর্ক করা হয়েছিল। তাদের দূতাবাস নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া বের হতে মানা করেছিল।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বাহারাইনের এমপি আলী এ আল আরাবি বলেন, “বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই সুন্দর। আমি একা যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা শপিং মলে ঘুরেছি। কেনাকাটা করেছি। একাধিকার আমি রিকশায় ঘোরাঘুরি করেছি। আমি কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি না। আমি খুবই নিরাপদ বোধ করছি। এখানকার মানুষ খুবই বন্ধুপ্রিয়।”

সুইজারল্যান্ডের আইপ্রণেতা মার্গারেট কেনার নেলেনও একই ধরনের মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “এটা আমার ঢাকায় দ্বিতীয় দিন। সম্মেলেন ফাঁকে যে সময়টা পাচ্ছি আমি ঘোরাঘুরি করছি। ঢাকায় এসে আমি চামড়ার জুতোসহ কিছু কেনাকাটা করেছি। এই সম্মেলনে আমার সাথে আমার স্বামীও এসেছেন। তিনি টুরিস্ট হিসেবে শনিবার ঢাকায় হেঁটে বেড়িয়েছেন। কোনো ধরনের সমস্যা তার মনে হয়নি।”

তিনি জানান, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে দূতাবাস থেকে একটি সতর্ক বার্তা ছিল। বাংলাদেশ টুরিস্টদের জন্য নিরাপদ নয় এমন খরবও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অনেক সময় প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকায় ১/২জন বিদেশি আক্রমনের শিকার হয়েছেন।

“তবে এখানে এসে তেমনটি মনে হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি না।আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয়। তারা শান্তি চায়।”

স্পেনের এমপি লোপেজ অস্কার বলেন, “কোনো দেশে আসার আগে সেই দেশের সার্বিক বিষয়ে অবহিত করা প্রত্যেক দেশের দূতাবাসেরই সাধারণ কাজের মধ্যে পড়ে। আমরাও সেই বিষয়ে অবহিত হয়েছি। এখানে সাম্প্রতিক কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা আমরা জেনেছি। তবে এই মুহূর্তে এখানে এসে কোনো ধরনের সমস্যা দেখছি না ।”

শনিবার ঢাকায় শুরু হয়েছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলন, যে ফোরামে বিশ্বের ১৭৩টি দেশ সদস্য, সহযোগী সদস্য ১১টি দেশ।

এর আগে বাংলাদেশে এত বড় কোনো ফোরামের এত বড় অনুষ্ঠান হয়নি। তাই সম্মেলন ঘিরে ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি, আর তার উদ্বোধন অনুষ্ঠানেই তাক লেগে গেছে বিদেশি প্রতিনিধিদের।