আতিয়া মহল পুলিশের দায়িত্বে, দুই লাশ এখনও ভেতরে

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় তিন দিন ধরে চলা ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ এর সমাপ্তি টেনে দুই জঙ্গির লাশ ও পাঁচ তলা আতিয়া মহল পুলিশের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 12:33 PM
Updated : 28 March 2017, 01:35 PM

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকন উদ্দিন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকাল সোয়া ৫টায় তারা ওই ভবনের দায়িত্ব বুঝে পেয়েছেন।

“দুই জঙ্গির লাশ এখনও ভেতরে রয়েছে। পুলিশ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।”

তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযান সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার কথা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে শিববাড়ি পাঠানপাড়ার ওই ভবন ঘিরে ফেলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সোয়াট এবং সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। শনিবার সকালে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান।

শুরুতে সোয়াট এ অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে তারা পিছু হটে বলে সেনা কর্মকর্তারা জানান।

প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে সেনাঅভিযানের নাম বদলে হয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকা ঘিরে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সেনা অভিযান শুরুর পর ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে শনিবারই ওই ভবন থেকে ৭৮ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ওই অভিযানের মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় আতিয়া মহল থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে এক জায়গায় দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হন।

রোববার বিকালে এক ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানান, ওই বাড়িতে অন্তত দুই জঙ্গি মারা পড়েছে এবং ভেতরে আরও জঙ্গি রয়েছে বলে তাদের ধারণা।

তিনি বলেন, বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিদের কাছে ‘স্মল আর্মস’, এক্সপ্লোসিভ ও আইইডি আছে। তারা সবাই সুইসাইড ভেস্ট পরে আছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে তারা আইইডি পেতে রাখায় পুরো বাড়ি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। ফলে অভিযানে সময় লাগছে।

সোমবারও সকাল থেকে দফায় দফায় গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এরই মধ্যে কমান্ডোরা আতিয়া মহলের দুই দিকের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এক পর্যায়ে ওই বাড়ি থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি তা নেভায়।

ওইদিন রাতে আবারও সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসে জঙ্গি আস্তানার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং ভেতরে চারটি লাশ পাওয়ার কথা জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল।

তিনি বলেন, নিহত চার জঙ্গির মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের মধ্যে এক পুরুষ ও এক নারীর লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভেতরে অবস্থানরত সম্ভাব্য সব জঙ্গি নিহত হলেও তারা বাড়িটিতে ব্যাপক বিস্ফোরক মজুদ করে রাখায় সোমবার সন্ধ্যয় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেননি ব্রিগেডিয়ার ফখরুল।

তিনি বলেন, “দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য আমরা সকলেই গর্বিত। আপনারও গর্ববোধ করতে পারেন। দেশবাসীর দোয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই খুব সুন্দর, সফলভাবে অভিযানটা চলেছে।”

সেনাবাহিনী আতিয়া মহলের দায়িত্ব পুলিশের হাতে বুঝিয়ে দেয়ার আগে মঙ্গলবার দুপুরে পরপর চারটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ওই ভবনে জঙ্গিদের ফেলে রাখা বোমা নিষ্ক্রিয়করণের কাজ চলছে বলে সে সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ওই ভবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিস্ফোরক শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে একটি ড্রোনসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেনাবাহিনী।

এদিকে দুপুরে দুই জঙ্গির লাশের ময়নাতদন্ত হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে ‘আগুনে পুড়ে’, পুরুষটি ‘বিস্ফোরণে’