মেডিকেল শিক্ষায় ত্রিমুখী জটিলতা: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষা তিন ধরনের প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 12:42 PM
Updated : 24 March 2017, 01:44 PM

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: প্রেক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক কামরুল বলেন, “বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষা ত্রয়ী প্রশাসনে তখনও ছিল, এখনও আছে। ত্রয়ী প্রশাসন মানে, বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল) কোর্স কারিকুলাম করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নীতি ও বদলি করে থাকে এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা নিয়ে তারা সনদ প্রদান করে।”

১৯৯৮ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ (আইপিজিএমআর-পিজি) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার পেছনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সব মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্বশাসনের কথা বলছেন দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য।

“ত্রয়ী প্রশাসন থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দরকার ছিল। সেই কারণে আমরা চেয়েছিলাম দেশের সকল মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্বশাসন। কিন্তু সেইভাবে সব কিছু হয়নি, শুধু একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে।”

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো বিএসএমএমইউয়ে নেই বলে অভিযোগ করেন উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান।

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ‘মূল বিষয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য যা যা দরকার, সেটা এখানে নেই। শিক্ষকদের কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। নার্সদের আবাসন ব্যবস্থা নেই। এমনকি শিক্ষার্থীদের থাকার হলও নেই। ভিসি-প্রো ভিসির আবাসনের ব্যবস্থা এখনও চিন্তাও করতে পারি না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাস্টার প্ল্যান রয়েছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “হাসপাতালের সামনে বাংলাদেশ বেতার যেখানে রয়েছে, সেটা এখন আমাদের জায়গা। কিন্তু সেটা এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। জুন মাসে তারা হস্তান্তর করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাস্টার প্ল্যান জরুরি।”

হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ‌না থাকার সমস্যা তুলে ধরে অধ্যাপক কামরুল বলেন, “বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই অর্থে ইমার্জেন্সি নেই। এত বড় হাসপাতাল, একটা রোগী রাত ১২টায় আসবে, তার চিকিৎসা হবে না, তা হয় না। আমরা ইমার্জেন্সি চালু করতে যাচ্ছি।”

জরুরি বিভাগের অবকাঠামো ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইমার্জেন্সি বিভাগের জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এখন যন্ত্রপাতির জন্য চলতি মাসেই বড় অংকের একটি টেন্ডার হতে যাচ্ছে।”

মতবিনিময় সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণের জন্য তৎকালীন ‘স্নাতকোত্তর চিকিৎসা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শিক্ষক সমিতির’ দাবি সম্বলিত ওই সময়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনপত্র সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়।

তখনকার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. কামরুল হাসান ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছরপূর্তির দিন শুক্রবারের এই সভা ‘কাকতালীয়’ অভিহিত করে অধ্যাপক কামরুল বলেন, “এটাই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে মাত্র তিন বছর হচ্ছে একজন ভাইস চ্যান্সলরের দায়িত্বকাল। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর। এটা আইন দ্বারা নির্ধারিত।”

রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, “প্রতিদিন এই মেডিকেলে সকালে-বিকালে বহির্বিভাগ ও স্পেশাল আউটডোরে ৫০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন। ২০১৫ সালে এই মেডিকল থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “আন্তরিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করতে চেষ্টা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধি-প্রো-বিধি রয়েছে, সিন্ডিকেট আছে, একাডেমিক কাউন্সিল আছে, বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি আছে, সব মিলেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে পরিচালনা করার জন্য চেষ্টা করছি।”

কোরিয়ান সরকারের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার শয্যার একটি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক কামরুল।

তিনি জানান, হাসপাতালের প্ল্যানিং ও ডিজাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী জুলাইয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সেখানে সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে। সেন্টার বেইজড চিকিৎসা দেওয়া হবে।

এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যায়ের এ প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, “কোরিয়ান সরকার এক হাজার কোটি টাকা দেবে; অন্যান্য ব্যয় বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. আব্দুল হাই, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, মানবসম্পদ পরিচালক ডা. জামাল উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. আব্দুল্লাহ আল হারুন বক্তব্য রাখেন।