স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জারি করা এক রুলের শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষ আট সপ্তাহ সময় চাইলে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কমিটি বা কমিশন গঠনে কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আজ প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের পক্ষ থেকে আট সপ্তাহের সময় চাওয়া হলে আদালত আগামী ৯ মের মধ্যে এ বিষয়ে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে।”
দৈনিক ইনকিলাবে ‘ইউনূসের বিচার দাবি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনসহ কয়েকটি পত্রিকার খবর আমলে নিয়ে একই বেঞ্চ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই রুল জারি করে।
রুলে ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে ১৯৫৬ সালের ইনকোয়ারি অ্যাক্টের তৃতীয় অনুচ্ছেদসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন অনুযায়ী কমিটি বা কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।
ওই দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, সেতু সচিব, দুদক চেয়ারম্যান ও আইজিপিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পাশাপাশি কমিটি বা কমিশন গঠনে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেয় আদালত।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংক চুক্তি করেও দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে। পরে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত শুক্রবার ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়।
রায়ে বিচারক বলেছেন, এই মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশিরাও জড়িত ছিলেন।
সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।
দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তখনকার সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ওই মামলায় কারাগারেও যেতে হয়।
তবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে তদন্তের পর জানানো হয়।
দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে। সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেয় আদালত।