১১টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ওই অর্থ ফেরত দিতে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা আপিল বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে।
আদালতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আইনজীবী আহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “যারা টাকা ফেরতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, প্রথমে তারাই এ সুবিধা পাবেন। অন্যদের টাকা ফেরত পেতে আদালতে আবেদন করতে হবে। তারা কবে টাকা পাবেন, কীভাবে তাদের টাকা দেওয়া হবে তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে জানা যাবে।”
অন্যদিকে ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ, আইন ও সংবিধান কখনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি। এ রায় নিশ্চয়ই পুর্নবিবেচিত হবে। এতোগুলো টাকা সরকার কোথা থেকে ফেরত দেবে তা চিন্তার বিষয়। এখন সরকার যদি রিভিউ আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তা করা হবে।”
যাদের টাকা ফেরত দিতে হবে
# এস আলম গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানের ৬০ কোটি টাকা
# দি কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড এবং বারাউরা টি কোম্পানি লিমিটেডের ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা
# মেঘনা সিমেন্ট ইন্ড্রাস্ট্রিজের ৫২ কোটি টাকা
# বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের ১৫ কোটি টাকা
# ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের ৯০ লাখ টাকা
# ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ৬০ লাখ টাকা
# ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ১৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা
# বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা
# ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের ৩৫ কোটি টাকা
# ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের এক পরিচালকের ১৮৯ কোটি টাকা
# ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের সত্ত্বাধিকারীর ৬৫ লাখ টাকা
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা নেয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার।
জরুরি অবস্থা জারি করে দুর্নীতি দমন অভিযানের কথা বলে গ্রেপ্তার করা হয় দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের। ওই সময়ই ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই অর্থ আদায় করা হয়।
২০১০ সালে জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, তত্ত্বাবধায়ক আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রয়েছে।
এরপর বিভিন্ন সময়ে ১১টি প্রতিষ্ঠান হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে আদালতের রায় তাদের পক্ষে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিরুদ্ধে আপিল করলে হাই কোর্টের রায় স্থগিত হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই জরুরি অবস্থার সময়ে ওই অর্থ আদায়ের সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি এতোদিন গতি পায়নি।
অর্থ আদায়ের নয় বছর পর অবশেষে আপিল বিভাগের রায়ে ওই ১১ কোম্পানির অর্থ টাকা ফেরত পাওয়ার পথ তৈরি হল।