ভবন ভাঙতে ৬ মাস পেল বিজিএমইএ

ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বেআইনিভাবে নির্মিত ১৬ তলা বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে পোশাক রপ্তানিকারকদের এই সংগঠনকে ছয় মাস সময় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2017, 04:18 AM
Updated : 12 March 2017, 10:18 AM

ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বেআইনিভাবে নির্মিত ১৬ তলা বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে পোশাক রপ্তানিকারকদের এই সংগঠনকে ছয় মাস সময় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

বিজিএমইএ-এর সময়ের আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।

শুনানিতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

হাই কোর্ট ১৬ তলা ওই ভবন অবৈধ ঘোষণা করার পর আপিল বিভাগেও ওই রায় বহাল থাকে। বিজিএমইএ ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলে গত ৫ মার্চ তাও খারিজ হয়ে যায়।

চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ে হারের পর দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের শিল্পোদ্যোক্তাদের সমিতি বিজিএমইএ-এর সামনে ভবনটি ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ নেই এখন।

কার্যালয় সরিয়ে নিতে বিজিএমইএ তিন বছর সময় চাইলেও আদালত তাদের ছয় মাসের মধ্যে সে কাজ শেষ করতে বলেছে।

বিজিএমইএ-এর আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী শুনানির শুরুতেই তিন বছর সময় চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন।

বিচারক এ সময় দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ও হুন্দাই চেয়ারম্যানের জেলে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “জেনুইন স্টেটমেন্ট দেন। কোর্টকে বুড়ো আঙুল দেখাবেন না। যৌক্তিক গ্রাউন্ডে আসুন। দুইটা বাড়ি ভাড়া করে অফিস স্থানান্তর করা যায় না? সরকারকে বলেন গুলশানে আপনাদের দুইটা বাড়ি ভাড়া করে দিতে।

“অথবা আপনারা শেরাটন কিংবা সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে ভাড়া নেন। ২০১১ সালে হাই কোর্ট রায় দিয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগ তা বহাল রেখেছে। এই সময়ের মধ্যে আপনারা সরানোর কোনো চেষ্টা করেননি।”

আদালত এরপর বিজিএমইএকে ছয় মাস সময় দিয়ে আবেদনটির নিষ্পত্তি করে দেয়।  

এ মামলায় হাই কোর্টে অ্যামিকাস কিউরির দায়িত্ব পালন করা অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত ছয় মাসের সময় দিয়েছে। ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলেছে। আমরা এই আদেশে সন্তুষ্ট। আইনের হাত অনেক লম্বা। আবারও প্রমাণিত হল, কেউ আইনি প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে নয়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে।

তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরই বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৮ নভেম্বর শুরু হয় ভবন তৈরির কাজ। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিজিএমইএর ভবন উদ্বোধন করেন।

হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ যাদের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তারাই মোট ৬ দশমিক ২১ একর জমি অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় ছেড়ে দেয় একই বছরে, অর্থাৎ ১৯৬০ সালে। পরে ১৯৯৮ সালে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ওই জমি একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে এর নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য বেআইনিভাবে প্রদান করে। অথচ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত আদৌ ওই জমির মালিক ছিল না।

রায়ে বলা হয়, “বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে।”