‘অপারেশন জ্যাকপট’র চলচ্চিত্রায়ন হচ্ছে

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নৌসেনাদের বীরত্বগাথা তুলে ধরতে ‘অপারেশন জ্যাকপট’র চলচ্চিত্রায়ন হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2017, 12:26 PM
Updated : 8 March 2017, 03:54 PM

একাত্তরের ১৫ অগাস্ট মুক্তিযোদ্ধা নৌসেনারা একযোগে চট্টগ্রাম, মংলা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ বন্দরে এক যোগে আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৬টি জাহাজ ও গানবোট ডুবিয়ে দিয়েছিল।

সেটা ছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম অভিযান, যা ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে পরিচিত।

নৌ-কমান্ডোদের দুঃসাহসিক সেই অভিযান রুপালি পর্দায় আনতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বুধবার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তথ্যটি জানানো হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠক সভাপতিত্ব করেন রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, তালুকদার আব্দুল খালেক, মো. আবদুল হাই, এম আব্দুল লতিফ এবং আনোয়ারুল আজীম (আনার) বৈঠকে অংশ নেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরের অবদান এবং অকুতোভয় বীর বাঙালি নৌ-কমান্ডোদের দুঃসাহসী অভিযানকে স্মরণীয় করে রাখতে মুক্তিযুদ্ধের উপর চলচ্চিত্র ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।”

১৯৭১ সালে ফ্রান্সে পাকিস্তান নৌবাহিনীর সাবমেরিনার হিসেবে ‘মাংরো সাবমেরিন’-এ প্রশিক্ষণকালে নয়জন বাঙালি নৌসেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা জেনে গোপনে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নেন।

এরপর মাদ্রিদ, জেনেভা, রোম ও বার্সেলোনায় ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে দিল্লি পৌঁছায় নয়জনের এ দলটি। পরে ভারতের ঐতিহাসিক পলাশীর ভাগীরথির তীরে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ওই নয়জনসহ মোট ১৪৮ জন নৌ কমান্ডো অপারেশন জ্যাকপটের জন্য প্রস্তুত হন।

মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাঞ্চলকে যে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়, তার মধ্যে ১০ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিলেন নৌ-কমান্ডোরা।

১৯৭১ সালের ১০ অগাস্ট কমান্ডোরা বাংলাদেশে ঢোকেন এবং ১৫ অগাস্ট মধ্যরাতে অপারেশন পরিচালনার জন্য চূড়ান্ত সংকেত পান।

একাত্তরে অপারেশন জ্যাকপটে বিধ্বস্ত নৌযানে এই ছবি বাংলাপিডিয়ার সৌজন্যে

বাংলাপিডিয়ার বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬০ জন কমান্ডো গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী (বীরউত্তম)। অপারেশন পরিচালিত হয় সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে।

“১৫ অগাস্ট রাত ১২টায় অপারেশন জ্যাকপট শুরু হয়। কমান্ডোরা জাহাজে মাইন সংযোজন করে ফেরত আসেন। কিছু মাইন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিস্ফোরিত হয়। ‘এমভি হরমুজ’ ও ‘এমভি আল-আববাস’ নামে দুটি পাকিস্তানি জাহাজসহ বেশ কয়েকটি বার্জ ও জাহাজ ধ্বংস হয়।”

সাবমেরিনার আহসানউল্লাহর (বীরপ্রতীক) নেতৃত্বে ৪৮ জন নৌ-কমান্ডো মংলা বন্দরে অভিযান চালান বলে বাংলাপিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। বন্দরের ৬টি জাহাজ মাইনের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়।

চাঁদপুর নদীবন্দর অভিযানে ছিলেন সাবমেরিনার বদিউল আলমের (বীরউত্তম) নেতৃত্বে ২০ জন নৌ-কমান্ডো। তারা কয়েকটি জাহাজ ধ্বংস করেন।

সাবমেরিনার আবদুর রহমান (বীরবিক্রম) ও শাহজাহান সিদ্দিকের (বীরবিক্রম) নেতৃত্বে ২০ জনের কমান্ডো দল নারায়ণগঞ্জ ও দাউদকান্দি নদীবন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করে।

বাংলাপিডিয়া লিখেছে, “পাকিস্তান সরকার অবরুদ্ধ বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বলে বহির্বিশ্বে যে প্রচারণা চালায়, নৌ-কমান্ডোদের সফল অভিযানের মাধ্যমে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌ-অভিযানের খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়। এরপর থেকে কোনো বিদেশি জাহাজ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসতে রাজি হয়নি। অপারেশন জ্যাকপটের কারণে মুক্তিযুদ্ধ বহির্বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।”

মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের চলচ্চিত্রায়ন আগে ঘটলেও নৌসেনাদের বীরত্বগাথা এই প্রথম আসছে রুপালি পর্দায়।