নিউ ইয়র্কের বাংলা সাপ্তাহিক ‘ঠিকানাকে’ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আগে দুটো আদালত ছিল,তাই বিচারকাজ দ্রুত এগোচ্ছিল।
“একটি আদালত স্থগিত করায় স্থবিরতায় আক্রান্ত হয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার। যেসব মামলা এখনো তদন্তাধীন সেগুলো চালু হতে হতে অনেক অভিযুক্ত ও সাক্ষী বয়সের কারণে মারা যেতে পারেন।”
২০১০ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলেও কাজ গতিশীল করতে দুটি করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তা কমিয়ে আবার একটি করা হয়।
হান্নান খান বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে গতি আনতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ বিষয়ক আদালত গঠনের কথা শোনা গেলেও তাতে কোনো অগ্রগতি নেই।
তদন্ত সংস্থার প্রধান বলেন, “জার্মানিতে কিছুদিন আগেও ৯৩ বছর বয়সী একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে। সরকার যদি এই বিচার দ্রুত শেষ করতে চায় তাহলে আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
“অন্তত বিভাগীয় শহরে একটি করে আদালত স্থাপন করতে হবে। তদন্তের জন্য লোকবল বাড়াতে হবে। যে ব্যক্তি অভিযোগ করলেন,রাষ্ট্রের দায় আছে,তার প্রতিকার করার। না হলে রাষ্ট্র দায়বদ্ধ থাকবে।”
হান্নান খান জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন আটটি মামলার বিচার চলছে। অভিযোগ জমা আছে ৬৯১টি,যার মধ্যে ৩৪ আসামির বিরুদ্ধে ২৭ টি মামলা তদন্তাধীন আছে।
যুদ্ধাপরাধীরা দেশে-বিদেশে বিচারের বিরুদ্ধে এখনও সক্রিয় রয়েছে বলেও মনে করেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক।
তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী বিচারকাজে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে অনেক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা টবি ক্যাডম্যান নামে একজন ব্যারিস্টারকে লবিষ্ট হিসেবে নিয়োগ করেছে, তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন দেশের মিডিয়াতে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে, চালাচ্ছে, আসামিরাও দেশে-বিদেশে প্রচুর অর্থ খরচ করছে।
“পাকিস্তান ও তুর্কি পার্লামেন্ট এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিল,বাংলাদেশ সরকার যার প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ট্রাইব্যুনালে অবশ্য বিদেশি কোনো কূটনীতিক কিংবা কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ নিয়ে সুপারিশ করেন নাই; করার সাহসও পায় নাই।”
তিনি বলেন, “আসামিদের পক্ষ থেকে অনেককে ভয় দেখানো হয়। আমাদের দেশে সাক্ষী সুরক্ষার আইন নেই। অথচ এই আইন প্রণয়নের জন্য তদন্ত সংস্থা অনেক আগেই প্রস্তাব রেখেছে।
“যদিও এখন তদন্ত সংস্থার অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব জেলায় প্রশাসক, পুলিশ সুপার,বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের নিয়ে সাক্ষী সুরক্ষা কমিটি করেছে। ওই কমিটি মাসে একটি করে মিটিং করে, তারাই মূলত সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করে।”
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়ের পর হওয়া সহিংসতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,“সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ের পরে যে ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছিল জামায়াতে ইসলামী, তা জনগণের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করেছিল। সরকার কঠোর হস্তে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সেই ভয়ভীতি দূর করেছে।”
শুক্রবার ‘সাপ্তাহিক ঠিকানায়’ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে হান্নান খান বলেন, ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে ‘খোকন রাজাকার’র সুইডেনে অবস্থানের বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য আছে।
“যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লন্ডন, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত ও পাকিস্তানে কতজন আসামি পালিয়ে আছে তার সঠিক সংখ্যা তদন্ত সংস্থার কাছে নেই । সরকার ইন্টারপোল এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অভিযুক্তদের অবস্থান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে।”