জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠেঙ্গাচরের পরিবেশ অনান্য চরগুলোর মতোই। আনুষঙ্গিক অবকাঠামো তৈরি করা হলে এখানে জনবসতি স্থাপনে কোনো সমস্যা হবে না।
এ মাসের শুরুতে বন বিভাগের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মেঘনার মোহনায় হাতিয়া সংলগ্ন এই দ্বীপটি এখনও মানুষ বসবাসের উপযোগী নয়।
নোয়াখালীর উপকূলীয় বন বিভাগের নলচিরা রেঞ্জ কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন ভূঁঞার ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্তে যায়।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুব্রত কুমার দে ও সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আলী ঠেঙ্গারচর ঘুরে এসে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেন।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঠেঙ্গারচরে পাঠানোর পরিকল্পনা সম্প্রতি প্রকাশের পর থেকে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।
ঠেঙ্গারচরটি বসবাসের উপযোগী নয় দাবি করে রোহিঙ্গাদের সেখানে না পাঠাতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আহ্বান জানিয়ে আসছিল, তাদের সে দাবিকে ভিত্তি দিয়েছিল বন বিভাগের প্রতিবেদন।
এখন জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে তার বিপরীত তথ্য এল।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার কাছে মেঘনার মোহনায় একটি বিরান দ্বীপ ঠেঙ্গারচর। এই চরটির আয়তন জোয়ারের সময় ১০ হাজার এবং ভাটার সময় ১৫ হাজার একর বলে জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটি উল্লেখ করেছে। ২০১০-১১ সাল থেকে সরকারিভাবে বনায়ন শুরু হয়। জনমানবহীন চরটি এখন মূলত গরু-মহিষের চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইঞ্জিনচালিত নৌযান ছাড়া সেখানে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। হাতিয়া থেকে এ দ্বীপের দূরত্ব আনুমানিক ২০ কিলোমিটার। হাতিয়া থেকে যেতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে।
বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন ঠেঙ্গারচরকে বসবাসের অনুপযোগী বলার ক্ষেত্রে পানীয় জলের কোনো উৎস না থাকা, দ্বীপটির প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটায় ডুবে যাওয়া, দ্বীপের অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানটি এখনও স্থায়ী না হওয়া, পাড় থেকে নেমে উঁচু স্থানে যেতে হাঁটু সমান কাদার স্তর এবং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কারণ দেখিয়েছিলেন।
জেলা প্রশাসনের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ারের সময় পানি ঢুকে পড়া হাতিয়ার যে কোনো চরেই জন্যই স্বাভাবিক ঘটনা, ঠেঙ্গারচরও এর ব্যতিক্রম নয়। আর বসতি স্থাপনের জন্য বেড়িবাঁধ ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করাও যো কোনো চরের ক্ষেত্রেই খাটে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুব্রত দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিদর্শনকালে আমরা ভরা জোয়ারের সময়ও পানির স্তর থেকে অন্তত চার ফুট উঁচুতে চরটি দেখে এসেছি।
“বনের গাছগুলোও বেশ পোক্ত হয়েছে। আনুষঙ্গিক অবকাঠামো করা হলে এখানে জনবসতি স্থাপনে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছি না।”
নিরাপত্তার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের সুপারিশও করেছে জেলা প্রশাসনের এই কমিটি।
জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস বলেন, “সুপারিশে ঠেঙ্গারচরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে মত দেওয়া হয়েছে।”
গত কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নেওয়া পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে সামাজিক নানা সমস্যার কথা বলে আসছে সরকার।
রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশাল সংখ্যক এই শরণার্থীকে অন্তরায় হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
তাই রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। কক্সবাজারে গাদাগাদি করে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণেই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বদরে মুনির বলেন, “লোকালয়ে থেকে দূরে চরে রোহিঙ্গাদেরকে পুনর্বাসন করা হলে তাদের পক্ষে অপরাধ ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে যাবে।”
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার এই পরিকল্পনায় নোয়াখালীতে আপত্তি উঠলেও হাতিয়ার সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস মানবিক কারণে একে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দ্বীপের মধ্যে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আর থাকবে না।