পদ্মায় ‘দুর্নীতির গল্প সৃষ্টিকারীদের’ কাঠগড়ায় নিতে হাই কোর্টের রুল

পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির মিথ‌্যা গল্প’ বানানোর নেপথ‌্যে ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2017, 07:26 AM
Updated : 15 Feb 2017, 07:36 AM

‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে ১৯৫৬ সালের ‘ইনকোয়ারি আক্ট’ এর তৃতীয় অনুচ্ছেদ এবং সংশ্লিষ্ট অন‌্যান‌্য আইন অনুযায়ী কমিটি বা কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে এই রুলে।

সেই সঙ্গে ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ কেন বিচারের মুখোমুখী করা হবে না- তাও জানতে চেয়েছে আদালত।

বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করে।

এ আদালতের ডেপুটি অ‌্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, এই রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, যোগযোগ সচিব, দুদক চেয়ারম‌্যান ও আইজিপিকে বিবাদী করা হয়েছে। তাদের দুই সপ্তাহের মধ‌্যে রুলের জবাব দিতে হবে।

এছাড়া কমিটি বা কমিশন গঠনে কী উদ‌্যোগ নেওয়া হয়েছে- তা জানিয়ে ৩০ দিনের মধ‌্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবে ‘ইউনূসের বিচার দাবি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি পত্রিকায় আসা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত এই রুল জারি করেছে।

বিষয়টি আগামী ২০ মার্চ শুনানির জন‌্য আবার আদালতে উঠবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন‌্য চুক্তি করেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা স্থগিত এবং পরে বাতিল করে। পরে তাদের বাদ দিয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত শুক্রবার ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়।

রায়ে বিচারক বলেছেন, এই মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব‌্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশিরাও জড়িত ছিলেন।

সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব‌্যাংকের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।

মঙ্গলবারও একনেক বৈঠকে শুরুতে কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ‘মিথ‌্যা অভিযোগের’ পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন।  

“একটা ব্যক্তির স্বার্থে আঘাত লাগল বলে, সেই ব্যক্তি দেশের এত বড় একটা মূল্যবান প্রোজেক্ট...  যা হলে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হতে পারত...।”

দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তখনকার সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ওই মামলায় কারাগারেও যেতে হয়।

তবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে তদন্তের পর জানানো হয়।

দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে। সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেয় আদালত।