এই সুপারিশের মধ্যে থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যূন চার জনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নতুন সেই কমিশন দায়িত্ব নেবে; তাদের অধীনেই ২০১৯ সালের শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।
সব প্রক্রিয়া শেষে নির্ধারিত ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে দশজনকে চূড়ান্ত করে।
বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তারা বঙ্গভবনে যান এবং রাষ্ট্রপতির হাতে নামের তালিকা ও প্রতিবেদন তুলে দেন। আধা ঘণ্টার বেশি সময় তারা বঙ্গভবনে ছিলেন।
বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে কারও নাম বলেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম
ওই পদের জন্য ১৯৭৩ ব্যাচের সরকারি কর্মকর্তা কে এম নুরুল হুদা ও ১৯৭৭ ব্যাচের আলী ইমাম মজুমদারের নাম সুপারিশের খবর সংবাদ মাধ্যমে আসার পর যোগাযোগ করা হলে তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ফোন পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে স্বীকারও করেছেন।
দীর্ঘদিন ওএসডি থাকার পর ২০০৬ সালে সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া কে এম নুরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কাছে কোনো পদের বিষয় উল্লেখ করেনি। সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেলে যোগ দেব, আমি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তো আর যাব না।”
নুরুল হুদার বাড়ি পটুয়াখালীতে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয় যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পাওয়া আলী ইমাম সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রায় পুরোটা সময়ে ওই দায়িত্বে ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লায়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সংস্থাপন সচিবের দায়িত্ব পালন করা আলী ইমাম দশম সংসদ নির্বাচনের এক মাস আগে ২০০৮ সালের নভেম্বরে অবসরে যান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কেবিনেট ডিভিশনে যারা (সার্চ কমিটি) সংশ্লিষ্ট আছেন, তারা কথা বলেছেন।”
তবে কোন কর্মকর্তা, কবে, কখন কীভাবে যোগাযোগ করেছেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এর আগে ২০১২ সালেও সিইসি পদের জন্য সার্চ কমিটি আলী ইমাম মজুমদারের নাম সুপারিশে করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সিইসি পদে নিয়োগ দেন সাবেক সচিব কাজী রকিব উদ্দিন আহমদকে।
সার্চ কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াদুদ
বঙ্গভবনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম রাত ৯টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। এই বিভাগ সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।
জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির বৈঠকের পর অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, “অনুসন্ধান কমিটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই প্রস্তাবিত নাম ও প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যে নাম দিয়েছিল, তার মধ্য থেকেই নাম থাকবে বলে মনে হচ্ছে।”
আর বঙ্গভবনের বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য দুইজন এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আট জনের নাম চূড়ান্ত করে সুপারিশে জমা দিয়েছে সার্চ কমিটি।
“কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া দল দল ও সুশীল সামজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পাওয়া নামের তালিকা পর্যালোচনা করে দশ জনের নাম চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করেছেন তারা।”
জয়নাল আবেদীন জানান, নতুন নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে বলে কমিটি আশা প্রকাশ করেছে। আর সার্চ কমিটি নির্ধারিত সময়ে তাদের দায়িত্ব ‘সুন্দরভাবে’ পালন করায় রাষ্ট্রপতি তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সার্চ কমিটির সদস্যরা (উপরে বাঁ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে)- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিরীণ আখতার ও সিএজি মাসুদ আহমেদ
>> নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
>> রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন ইসি গঠনের জন্য ২৫ জানুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি।
>> আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য শিরীণ আখতার।
>> সার্চ কমিটিকে ১০ কার্যদিবস, অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে বলা হয়। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এবার একজন নারীও নিয়োগ পাবেন জানিয়ে সে অনুযায়ী সুপারিশ করতে বলা হয়ে কমিটিকে।
>> গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম বৈঠকে বসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম প্রস্তাব চায় সার্চ কমিটি। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যেক দলকে পাঁচটি করে নাম জমা দিতে বলা হয়।
>> ৩০ জানুয়ারি ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বসে তাদের মতামত শোনেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। বিশিষ্টজনরা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দক্ষ, সৎ, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার জন্য সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দেন।
>> সার্চ কমিটির চিঠি পাওয়ার পর ২৫টি দল ৩১ জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামের প্রস্তাব জমা দেয়। সেসব প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে বসে সেদিনই ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেন সার্চ কমিটির সদস্যরা।
>> ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন আরও চারজন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বসে মতামত নেয় সার্চ কমিটি। যাচাই বাছাই শেষে এই কমিটি যেসব নাম সুপারিশ করবে, রাষ্ট্রপতি তার বাইরে যাবেন না বলে আশা প্রকাশ করেন বিশিষ্টজনদের একজন।
>> সেদিনের বৈঠকে অংশ নেন সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
>> ২ ফেব্রুয়ারি আবার বৈঠকে বসে সার্চ কমিটির সদস্যরা সংক্ষিপ্ত তালিকায় আসা নামগুলো পর্যালোচনা করেন। সেদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, তালিকা চূড়ান্ত করতে ৬ ফেব্রুয়ারি আবারও বসবে সার্চ কমিটি।
>> সোমবার বিকালে বসে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে এবং পরে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেয়।