ইসিতে ‘আসছে’ বাংলাদেশ প্রজন্ম

নতুন নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে এবার স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চাকরিতে যোগ দেওয়া সচিব পদমর্যাদার সাবেক আমলার নাম সুপারিশ করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2017, 05:14 AM
Updated : 6 Feb 2017, 08:23 AM

সার্চ কমিটির দুইজন সদস‌্য ও কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনার পদে বিভিন্ন ব‌্যাচের সাবেক আমলা, বিচারক, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ প্রধান ও অধ‌্যাপকদের নাম থাকতে পারে সুপারিশের তালিকায়।

সাবেক সিএসপি কর্মকর্তার নেতৃত্বে বর্তমান ইসিতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ৭৩ ব্যাচের একজন রয়েছেন, অন্যরা তার পরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তাদের সবার জন্ম ১৯৪৩ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে। তবে কখনোই পুরো কমিশনের সবাই বাংলাদেশ প্রজন্মের ছিলেন না।

নতুন ইসি নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে সহায়তার দায়িত্ব পাওয়া সার্চ কমিটির ছয় সদস‌্য‌ সোমবার সন্ধ‌্যা ৬টায় বঙ্গভবনে যাচ্ছেন, ওই বৈঠকেই তারা ১০ জনের নামের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার সন্ধ‌্যায় মহামান‌্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সার্চ কমিটির ছয় সদস‌্যের সাক্ষাত সূচি রয়েছে। আশা করা যায়, এ সময় সার্চ কমিটি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম সুপারিশ করতে পারেন।”

সার্চ কমিটি প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে থেকে নামের প্রস্তাব নিয়েছিল। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি ১২ জন ও ১ ফেব্রুয়ারি আরও চারজন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বসে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে মতামত নেন তারা; তৈরি হয় ২০টি নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা।

আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস‌্যের সার্চ কমিটির সদস‌্যরা বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে বিকাল ৫টায় বসবেন সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে। সেখানেই সংক্ষিপ্ত তালিকাটি আরও ছোট করে ১০ জনে নামিয়ে আনা হবে বলে সার্চ কমিটির সদস‌্য মহাহিসাব নিরীক্ষক মাসুদ আহমেদ জানিয়েছেন।

সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার হিসাবে প্রতিটি পদে দুই জন করে মোট ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির হাতে দেবে এ কমিটি। ওই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি অনধিক পাঁচজনের ইসি নিয়োগ করতে পারেন, যাদের মধ‌্যে এবার একজন নারী সদস্যও থাকছেন।

কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি এ মাসে বিদায় নেওয়ার পর নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। নতুন ইসি আগামী সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে সিইসি পদের জন‌্য বিচারপতি, মুখ‌্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ পদ ও সচিব পদমর্যাদার সাবেক কর্মকর্তাদের বেছে নেওয়ার পক্ষে মত এসেছে।

তবে সার্চ কমিটি এক্ষেত্রে সাবেক সচিবদের প্রাধান‌্য দিচ্ছে বলে জানা গেছে, যাদের বয়স হবে ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে।

সার্চ কমিটির সদস্য মাসুদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের মধ‌্যে থেকে ১০ জনকে চূড়ান্ত করবেন তারা।

“ভোটের দিন কাজ অনেক; মাঠ প্রশাসনের কাজে নির্দেশনা থাকে ইসির। সিইসি হিসেবে যিনি কাজটা পারবেন, সরকারের প্রাক্তন উঁচু স্তরের কর্মকর্তাদের নাম আমরা সুপারিশ করব; নৈতিকতা ও অন্যান্য মানদণ্ড আলোচনা করেই ১০ জনের তালিকা দেওয়া হবে।”

সার্চ কমিটির আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবারের বৈঠকেই নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। বিশিষ্টজনদের সুপারিশ মাথায় রেখে ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ ব‌্যক্তিদের বেছে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তারা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,

“৬০-৭০ বছর বয়সসীমার মধ্যে উপযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকা করতে গেলে সিএসপি কর্মকর্তাদের পাওয়া মুশকিল। বলা যায়, এবার বাংলাদেশ প্রজন্মের কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরাই আসছেন ইসিতে। সিইসি হিসাবে সচিব পদমর্যাদার সাবেক কাউকে বাছাই করা হতে পারে।”

সেই সঙ্গে চূড়ান্ত তালিকায় সাবেক আমলা, বিচারক, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ ও অধ্যাপকরা থাকতে পারেন বলে আভাস দেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “তালিকায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কর্মজীবনে যোগ দেওয়া ব্যক্তিরা থাকতে পারেন; ৭৩ ব্যাচ থেকে পরবর্তীতে শীষ কর্মকর্তারা থাকতে পারেন। তারা বাংলাদেশ প্রজন্ম হবে; সচিব পদমর্যাদার বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন কর্মকর্তারা থাকতে পারেন। সব কিছু সার্চ কমিটির সভায় চূড়ান্ত হবে।”

আরও পড়ুন

রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশের পর তা প্রকাশ করা হবে কিনা- সে বিষয়ে সোমবারের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিদায়ী সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ছিলেন সিএসপি কর্মকর্তা। তিনি ৬৯ বছর বয়সে ২০১২ সালে নির্বাচন কমিশনে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে জন্ম এ কর্মকর্তার।

এর আগে আরেক আমলা এটিএম শামসুল হুদা ৬৪ বছর বয়সে সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমান সিইসি ও আগের সিইসি সম-সাময়িক সিএসপি কর্মকর্তা ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনে সিইসি হিসাবে প্রথম সাবেক আমলা হিসেবে যোগ দেওয়া মোহাম্মদ আবু হেনা ৫৯ বছর বয়সে নিয়োগ পান। বিচারপতি এম এ আজিজ ৬৬ বছর ও বিচারপতি আবব্দুর রউফ সিইসি হন ৫৫ বছর বয়সে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ প্রজন্মর ব্যক্তিদের অনুসন্ধানে ১৯৪৭ সালের পরে যাদের জন্ম এবং ২০০৬ সালের পরে যারা অবসরে গেছেন তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

বিদায়ী কমিশনের একজন সদস‌্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবার আগ্রহ সিইসিকে ঘিরে থাকে। কিন্তু সব সদস্যের গুরুত্ব খুব বেশি। দক্ষ ও যোগ্য না হলে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হোঁচট খেতে হবে।

তিনি বলেন, “পাঁচ সদস্যের ইসি নির্বাচন পরিচালনার পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একটি টিমওয়ার্ক গড়ে তুলতে সবার মধ্যে ঐকমত‌্য থাকা জরুরি। তা না হলে কোনো কোনো সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও ঘুরে যেতে পারে।”