রাষ্ট্রপতি গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি শনিবার প্রথম বৈঠকেই একডজন বিশিষ্টজনকে মতামত দেওয়ার জন্যে আমন্ত্রণ জানায়। সোমবার এই বৈঠক হবে।
আমন্ত্রিতদের মধ্যে দুজন সাবেক উপাচার্য এবং একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় নিজেদের কথা বলেন।
তাদের মতে, অনুসন্ধান কমিটি মতামতের জন্য তাদের ডেকেছে। তাই পরামর্শ দেওয়া ছাড়া তাদের কিছু করারও নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতীতে নির্বাচন কমিশন বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি।
“আশা করি, আগামীতে আমরা সবার কাছে আস্থাভাজন একটি ইসি পাব; যারা সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে।”
বিএনপি শাসনামলে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী এই অধ্যাপক বলেন, বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে তারা অভিন্ন মতামত দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
“অনেকের বক্তব্য শুনেছি গণমাধ্যমে; আমাদের সবার বক্তব্য একটাই-নিরপেক্ষ কমিশন গঠিত যেন হয়। যারা নির্বাচন আয়োজনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবে। সেক্ষেত্রে সৎ, মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বাছাই করে যেন রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আরেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী ‘নৈতিক অবস্থান ও নিরপেক্ষতার’ প্রশ্নে দৃঢ় মনোভাবের ব্যক্তিদের নাম সুপারিশের মতামত দেবেন বলে জানান।
“আমরা মত বিনিময় করব; এতে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বাছাই করতে হবে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসাবে। তারা যেন বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে সাংবিধানিকভাবে কাজ করে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।”
সঠিক ব্যক্তি বাছাই ও মনোনয়নে নৈতিকতার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ আমলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব পালনকারী এই অধ্যাপক।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মতবিনিময়ের আগে নিজের পরামর্শ নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “আমি এখনই এ নিয়ে কথা বলতে চাই না; পরামর্শ দিয়ে এসে কী বলেছি তা তুলে ধরব।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, “নির্বাচন কমিশনের বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের বাছাইয়ের পরামর্শ থাকবে আমাদের।
“বিশেষ করে ছাত্র ও চাকরি জীবনে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকে এমন ব্যক্তিদের নাম দেওয়ার সুপারিশ রাখা হবে।”
তার মতে, গ্রহণযোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের নাম বাছাই হলে তারা সহজে নিজেদের কাজের মাধ্যমে সবার কাছে আস্থাভাজন হতে পারবে। রাষ্ট্রপতির ইতিবাচক উদ্যোগও সঠিকভাবে কাজ দেবে।
আমন্ত্রিত অন্যরা হলেন বিচারপতি আব্দুর রশিদ, সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক তোফায়েল আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নির্বাহী বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও সাবেক পুলিশ মহা পরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা।
গঠনের বৈধতা নিয়ে আদালতে এজন আইনজীবীর রিট আবেদন, সার্চ কমিটির সদস্যদের নিরপেক্ষতা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে শনিবার কাজ শুরু করে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি।
১০ কার্যদিবস সময় তাদের। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ কমিটিকে বঙ্গভবনের কাছে নামের সুপারিশ জমা দিতে হবে। তার মধ্য থেকে নতুন ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বিদায় নেবে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বর্তমান নির্বাচন কমিশন।