বুধবার সার্চ কমিটি গঠিত হওয়ার পর ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আশা করা হচ্ছে, যাতে প্রথমবারের মতো একজন নারীও অন্তর্ভুক্ত হবেন।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে বিদায় নেবেন। তারপরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির; সংবিধানে বলা আছে, একটি আইনের অধীনে তিনি এই নিয়োগ দেবেন।
তবে চার যুগেও ওই আইনটি হয়নি। আগের রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন।
অর্থাৎ সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তা থেকে নিয়োগ দেবেন।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও একই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। তবে গতবার চার সদস্যের সার্চ কমিটির পরিবর্তে এবার ছয় সদস্যের কমিটি করেছেন তিনি। এই কমিটিতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে তিনি এনেছেন।
গঠিত সার্চ কমিটির সদস্যরা হলেন- আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাই কোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, সিএজি মাসুদ আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও শিরীণ আখতার।
গতবার সার্চ কমিটিতেও প্রধান ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গতবারও হাই কোর্টের একজন বিচারক এবং পিএসপি চেয়ারম্যান ও সিএজি পদধারীরা কমিটিতে ছিলেন।
সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাল সার্চ কমিটির বৈঠক হবে।
“কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সহায়তা দেব; গতবারের মতো একই পদ্ধতিও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হবে।”
আহ্বাবক বিচারপতি হওয়ায় এবারও সুপ্রিম কোর্ট ভবনের সম্মেলন কক্ষে সার্চ কমিটির সভা হতে পারে।
এই কমিটি প্রস্তাবিত বিভিন্ন নাম থেকে এবং নিজেরা বাছাই করে যোগ্যদের একটি একটি তালিকা রাষ্ট্রপতিকে দেবে। এজন্য তাদের সময় দেওয়া হয়েছে ১০ কার্যদিবস।
২০১২ সালের সার্চ কমিটি ২২ জানুয়ারি গঠনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিল। তার মধ্য থেকে ৫ জনকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপ্রধান।
# গতবার সার্চ কমিটি গঠনের পরপরই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচটি নাম পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছিল।
# সেই সঙ্গে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সব মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্যসচিবের নামের তালিকাও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চেয়েছিল গতবারের সার্চ কমিটি।
# একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধককে অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারকদের নামের তালিকা কমিটিতে পাঠানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল।
# এছাড়া সার্চ কমিটির সদস্যরা নিজ বিবেচনায় যোগ্য ব্যক্তিদের নাম সংগ্রহ করেন।
সব নাম নিয়ে বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি। তারপর তারা সুপারিশের তালিকা চূড়ান্ত করে। এবারও সেরকমই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যোগ্যদের নাম সংগ্রহে গতবারের মতো যে কোনো ধরনের সহায়তা কমিটি চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তা করবে বলে জানান শফিউল আলম।
“অনুসন্ধান কমিটির কার্য পদ্ধতি কমিটির সদস্যরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেব। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চাওয়া কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সাবেক উচ্চ পদস্তদের নাম সংগ্রহ করার বিষয়ে সহায়তা চাইলে আমরা দেব।”
এবার তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির কোরাম গঠিত হবে; সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে তারা। সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিজেদের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে তা পাঠাবে সার্চ কমিটি। রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিলুপ্তি ঘটে এই কমিটির।
গতবারের সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব কাজী রকিবউদ্দীনের নাম প্রস্তাব করেছিল।
পাশাপাশি চার জন কমিশনার হিসেবে একজন নারীসহ আটটি নাম সুপারিশ করে। তারা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও শাহ মো. মনসুরুল হক, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব আবদুল মোবারক, সাবেক পুলিশপ্রধান হাদিস উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাবেদ আলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক নিবন্ধক ফজলুল করিম, সাবেক দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ এবং এনজিও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন মুরশিদ।
তার মধ্য থেকে কাজী রকিবকে সিইসি এবং আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী, মো. শাহনেওয়াজ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
কখন বিদায় বর্তমান ইসির
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। সিইসি কাজী রকিব ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ অফিস করবেন বলে জানান বর্তমান ইসি ও এর সচিবালয়।
পাঁচ বছর আগে সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ ও তিন নির্বাচন কমিশনার ৯ ফেব্রুয়ারি এবং আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগ দিয়েছিলেন।
সেক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ণ হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তবে এটিএম শামসুল হুদা ও একজন নির্বাচন কমিশনার ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যোগ দিলেও বিদায় নিয়েছেন ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৪ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়ে বিদায় নেন ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
বর্তমান ইসির বিদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, “এখন পর্যন্ত বিদায় অনুষ্ঠানের কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সিইসির শেষ অফিস।”
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, “সিইসি ও আমরা তিনজন ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ অফিস করব। যেহেতু ৯ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়েছি, সেক্ষেত্রে ৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের ৫ বছর হচ্ছে।”
ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের একজন নির্বাচন কমিশনার ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবেন। সেক্ষেত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইসির ধারাবাহিকতা থাকবে।
“এর মধ্যে নতুন ইসি পুনর্গঠন হবে। শপথের পরই নতুন নির্বাচন ভবনে তাদের স্বাগত জানানো হবে।”
স্বাধীনতার পর ১১ জন সিইসি ও ১৯ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন সিইসি মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। সামরিক শাসনে বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম সাড়ে সাত বছর ছিলেন এই পদে।