প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন উদ‌্যোগের কথা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে তুলে ধরে জলবায়ু তহবিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিয়াজুল বাশার ডাভোস, সুইজারল্যান্ড থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 06:07 AM
Updated : 19 Jan 2017, 06:25 AM

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণে কম ভূমিকা রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ দেশকেই বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় বুধবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোস কংগ্রেস সেন্টারে ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্ল‌্যানারি সেশনে তিনি এ কথা বলেন ।

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, এইচএসবিসি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী স্টুয়ার্ট গালিভার এই সেশনে অংশ নেন।

শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তরে অলাভজনক মডেল নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।

বাংলাদেশকে ‘পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির’ পথে নেওয়ার চেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এই অর্থের অন্তত অর্ধেক জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর কাছে যেতে হবে।”

নিজস্ব সম্পদ থেকে ২০০৯ সালে ৪০ কোটি ডলারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার কথা আলোচনায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনে বাংলাদেশের ভূমিকা খুব সামান্য হলেও পরিবেশের ক্ষতির কারণে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হচ্ছে, নিঃশব্দে।

“জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের কৃষক, জেলে ও নারীরা ঝুঁকিতে পড়ছে। তাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার দিকে ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ব বাণিজ্য ও গবেষণায় এমন সমাধান বের করতে হবে যাতে জীবন, শস্য, কৃষি ও সম্পদ রক্ষা করা যায়।”

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের যে সীমা রয়েছে, তা অতিক্রম না করতে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কম কার্বন নিঃসরণ করে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছি। আমাদের উৎপাদন খাতকে আমরা গড়ে তুলছি পরিবেশবান্ধব হিসেবে।”

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে; যা থেকে দেড় কোটি মানুষ সৌর বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সৌর বিদ‌্যুৎ ব্যবহারকারী সবচেয়ে বড় জাতিতে পরিণত হবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশের কৃষি ব‌্যবস্থাকে জলবায়ু সহনীয় করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা হচ্ছে, যেগুলো প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। ধান উৎপাদনে পানির ব‌্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার পাশাপাশি সেচ কাজে সৌর বিদ্যুৎ ব‌্যবহারের উদ‌্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ধনী ও ক্ষমতাধরদের আলোচনা সভা হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত নেতা হিসেবে অংশ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা। চার দিনের এ সম্মেলনে বিভিন্ন সেশনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। 

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বুধবারের এই সেশনে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অনুসমর্থন জানিয়েছে এই আশা নিয়ে যে, বিশ্ব সম্প্রদায় যৌথ সমৃদ্ধির এই প্রচেষ্টায় তাদের দায়িত্বটুকু পালন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে রক্ষার জন‌্য প্যারিস চুক্তিকে অবশ‌্যই কার্যকর করতে হবে।