সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়েছে।
Published : 19 Jan 2017, 12:15 AM
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৫ পৃষ্ঠার এ রায় বুধবার প্রকাশ করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী তিন আসামি মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের সামনে এখন ৩০ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের সুযোগ থাকছে।
তাও নাকচ হয়ে গেলে শেষ চেষ্টা হিসেবে তারা অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। সে আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হলে কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দণ্ড কার্যকর করবে সরকার।
মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ওই তিন জঙ্গির আপিল শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গত ৭ ডিসেম্বর তা খারিজ করে দেয়।
ফলে হাই কোর্টের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশই বহাল থাকে।
আপিলে এই তিন আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান ও বিপুলের পক্ষে আদালতে শুনানি করেছিলেন আইনজীবী মো. আলী। আর রিপনের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
রায়ের পর মো. আলী জানিয়েছিলেন, আপিল বিভাগে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন তারা।
এ মামলার বাকি দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে। দণ্ডিত পাঁচ আসামির সবাই কারাগারে আছেন।
মুফতি হান্নান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি বলা হয় মুফতি হান্নানকে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মুফতি হান্নানের বাড়ি৷ গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় তিনি লেখাপড়া করেছেন।
২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতেই শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি।
রমনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনাতেও তার মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে আদালতে।
পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনার হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানসহ আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে হাই কোর্টে।
মামলা বৃত্তান্ত
সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন।
এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে।
সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী
পুলিশ ওইদিনই সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
যথাযথ ঠিকানা না থাকায় মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও পরে তাকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছর নভেম্বরে হয় অভিযোগ গঠন।
৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন।
আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
তাতে আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়, মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন হান্নান ও বিপুল। আর দেলোয়ারের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও ওই তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।