প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারকের বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, আপিল বিভাগ মালিকের হাতে মুন সিনেমা হল ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দিলেও বর্তমান বাস্তবতায় তা সম্ভব নয় জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে বলা হয়েছে, এর মালিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
এ কারণে আদালত একজন অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ প্রকৌশলীকে দিয়ে হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান।
পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইতালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়।
১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান একটি সামরিক ফরমান ঘোষণা করেন, যাতে বলা হয়, সরকার কোনো সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়।
ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস এরপর ২০০০ সালে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাই কোর্ট যে ঐতিহাসিক রায় দেয়, তাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়।
এরপর দীর্ঘ দিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইতালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ তখনকার ভূমিসচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে।
সেই অভিযোগের শুনানি করেই আপিল বিভাগ রোববার সিনেমা হলের জমি, স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। আদালতে মাকসুদুল আলমের পক্ষে ছিলেন শুনানি করেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে বলা হয়েছে মুন সিনেমা হল ছেড়ে দেওয়া হোক। পরে সরকারের পক্ষ থেকে রিভিউ করলে আদালতের আদেশে বলা হয়, ওই সিনেমা হল ছেড়ে দেওয়া হোক অথবা উভয়পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হোক।
“১৯৭২ সালে মুন সিনেমা হল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০১ সালে প্রতীকী মূল্য ১ টাকা দরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তা হস্তান্তর করে ডেভেলপারদের কাছে। ডেভেলপাররা মূল সিনেমা হলটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করে এবং নিজেদের অংশ বর্তমান দোকান মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
“এ অবস্থায় আমি আদালতের কাছে বলেছি, মুন সিনেমা হল আগের অবস্থায় ফেরত দেওয়ার কোনো উপায় নেই। এখন মুন সিনেমা হলের জমির মূল্য ও মুন সিনেমা হলের মূল স্ট্রাকচারের (কাঠামো) মূল্য ধরে এর মালিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এজন্য আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন।”
মূল্য নির্ধারণে অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ প্রকৌশলী নিয়োগের বিষেয়ে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নাম এসেছে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওই প্রতিবেদন পেলে আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেবে।