গুলিস্তানে হকার শুধু সন্ধ্যার পর

গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার রাস্তা ও ফুটপাতে আগামী রোববার থেকে কর্মদিবসগুলোতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আগে কোনো হকার বসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 07:55 AM
Updated : 11 Jan 2017, 10:57 AM

বুধবার নগর ভবন মিলনায়তনে হকার সমিতির নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তিনি।

মেয়র বলেন, “সাপ্তাহিক কর্মদিবসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আগে আমরা কাউকে ফুটপাত ও সড়কে বসতে দেব না। সড়কে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দেওয়া হবে না।”

“আমাদের এ কর্মসূচির আওতায় গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, জিরো পয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাত ও সড়ক থাকবে। আগামী রোববার থেকে কার্যকর করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন। এ কাজে ঢাকা মহানগর পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।”

তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হকাররা বসতে পারবেন বলে জানান তিনি।

হকারদের পুনর্বাসনে সিটি করপোরেশন সহায়তা করবে বলেও জানান মেয়র।

“কেউ বিদেশ যেতে চাইলে সিটি করপোরেশনে আবেদন করতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“বিদেশ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সহায়তা করবে সিটি করপোরেশন। যেখানেই সুযোগ হবে, আমরা চাই তারা নিজেরা নিজেদের কর্মসংস্থান করবে।”

সভার শুরুতে হকার নেতাদের উদ্দেশ্য করে সাঈদ খোকন বলেন, “রাস্তা ও ফুটপাতে পথচারী চলাচল নির্বিঘ্ন করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে। তাই সড়ক ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করতেই হবে।”

সভায় হলিডে মার্কেট নিয়ে আলোচনা করা কথা থাকলেও সে বিষয়ে হকার্স নেতারা কিছু বলেননি। তবে তারা পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ না করা এবং হকারদের পরিচয়পত্র দেয়ার দাবি জানান।

কোনো নিয়ম না থাকায় রাজধানীতে হকার বাড়ছে বলে সভায় অভিযোগ করেন বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন এবং ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটির কাছ থেকে টোকেন নিয়ে ফুটপাতে বসবেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর উঠে যাবেন। আর কার্ড থাকলে বাইরের কেউ হকার সেজে বসতে পারবে না।”

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম অভিযোগ করেন, প্রশাসনের লোকজন ‘লাইনম্যানদের দিয়ে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। লাইনম্যানদের কারণে ফুটপাতে শৃঙ্খলা আসছে না।

“একেকটি এলাকায় ১০০ জন হকারের জন্য একজন করে লাইনম্যান বসিয়ে দেন। তারা প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায় করে। এসব লাইনম্যানরাই হকারদের হলিডে মার্কেটে যেতে বাধা দিচ্ছে। তারা কারা এখন বলতে চাইনা। তালিকা আছে তা মেয়রের কাছে জমা দিব।”

চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম বন্ধ করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, “আমাদের কাছে তালিকা আছে, তালিকা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা বাস্তবায়ন করবে ঢাকা মহানগর পুলিশ।”

ফুটপাত থেকে হকার তুলে দিলে লাইনম্যান এমনিতেই উঠে যাবে বলে দাবি করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ।

“লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা একজনকে উঠাই, আরেকজন এসে বসে। তবে ফুটপাত থেকে হকার তুলে দিলে এসব লাইনম্যানের ব্যাপারও আর থাকবে না।

“রাস্তা ও ফুটপাত থেকে হকার পুরোপুরি তুলে দিতে পারলে ভালো। যদি রাখতেই হয় তাহলে মূল সড়কে না বসিয়ে আশপাশের কম গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তাদের বসতে দেওয়া যেতে পারে।”

সভায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবদুল ওয়াহাব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।