‘বাইর-টাইর করে দ্যান নাই তো?’

উৎসবের মেজাজে চলা নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচনে ভোটার ও এজেন্টদের খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও হাস্যরস করতে দেখা গেছে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে।

মাসুম বিল্লাহসুলাইমান নিলয়, কামাল তালুকদার ও , নারায়ণগঞ্জ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2016, 09:53 AM
Updated : 22 Dec 2016, 10:09 AM

বৃহস্পতিবার সকালে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

বেলা ১টায় এনায়েত নগর কিন্ডার গার্টেন এ্যান্ড হাই স্কুল কেন্দ্রে যান সাখাওয়াত; ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা শেষে বুথে গিয়ে নির্বাচনী এজেন্টদের খোঁজখবর নেন।

পুরুষদের ৫ নম্বর বুথে নিজের এজেন্টকে দেখতে না পেয়ে দায়িত্বরত সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে সাখাওয়াত বলেন, “সবাই তো আছে, আমার এজেন্ট কোথায়।”

তখন নির্বাচনী কর্মকর্তা ও অন্য প্রার্থীর এজেন্টরা জানান, ধানের শীষের এজেন্ট রোকসানা একই কেন্দ্রের মধ্যে থাকা পাশের ভবনের ভোটকক্ষে ভোট দিতে গেছেন।

‘খোশ মেজাজে’ থাকা বিএনপি প্রার্থী এরপর স্মিত হেসে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে বলেন, “বাইর-টাইর করে দ্যান নাই তো?”

সাখাওয়াতের এমন ‘সহাস্য প্রশ্নে’ উপস্থিত সবাই হেসে উঠেন।

পরে সাংবাদিকদের কাছে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বিএনপি প্রার্থী বলেন, “এখনো ভালোই চলছে। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নেই শুনেছি। বিশেষ করে বন্দর এলাকা থেকে।”

প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রিয়াজ মোহাম্মদ বনি আমিন কেন্দ্রে ভোটারদের ‘সরব’ উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, তিন হাজার ৭১৫ ভোটের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩০৬ জন তাদের রায় জানিয়েছেন।

তাঁতখানে নেই নৌকার এজেন্ট

ভোট শুরুর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সিদ্ধিরগঞ্জের তাঁতখানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুটি বুথে নৌকার এজেন্টের দেখা মেলেনি।

কেন্দ্রটিতে ঘুড়ি, চশমা, বই, ঠেলাগাড়িসহ বিভিন্ন প্রতীকের প্রার্থীদের এজেন্টও আসেননি বলে জানিয়েছেন পোলিং এজেন্ট আবু তৈয়ব শাওন।

ঘণ্টাখানেক পরে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইভী কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, “না, এটা সত্য না। এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।”

এসময় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দাঁড়ান, আমি এখন ফোন দিয়ে কথা বলে প্রমাণ করে দিচ্ছি, সেখানে আছে কি নেই।”

কয়েক মিনিট চেষ্টার পর তিনি তার এক কর্মীকে ফোনে তাঁতখানাতে এজেন্ট না থাকার কথা জিজ্ঞেস করে বলেন, “…কে এখনি আমাকে ফোন করতে বলো। আমি তাকে পাচ্ছি না।”

৮ মিনিট অপেক্ষার পরও সেই ফোন আসেনি। এরপর আইভি গাড়ি থেকে নেমে চলে যান।

জাল ভোটের অভিযোগ যুবলীগ নেতার

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান জালভোটের অভিযোগ এনেছেন।

তিনি বলেন, সকালে সফুরা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রে দুই ব্যক্তি জাল ভোট দিতে এসেছিল। পুলিশ তাদেরকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়।

ওই কেন্দ্রে প্রচুর জাল ভোট পড়েছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

“একজন মহিলা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, জাল ভোটের কারণে তিনি ভোট দিতে পারেননি।”

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, দুই ব্যক্তি এখানে যে স্লিপ নিয়ে এসেছিল, সেই স্লিপের সঙ্গে তাদের নাম মেলেনি।

“এদের একজনকে আটক করা হয়। পরে তার ছেলে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে এলে তাকে ভোট দিতে দেওয়া হয়। আরেক জন দৌড়ে চলে যান। আমি তাকে বললাম, কার্ড নিয়ে আসুন। মনে হয় পরে উনি কার্ড নিয়ে এসে ভোট দিয়েছেন।”

‘উপস্থিতি কম প্রভাব বিস্তারের ফল’

প্রভাব বিস্তারের ফলে কোনো কোনো জায়গায় ভোটার উপস্থিতি কম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।

দুপুরে নগরীর এআইটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এই শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সাখাওয়াত বলেন, “আমি সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। কোনো কোনো স্থানে ভোটার উপস্থিতি আমার কাছে কম মনে হয়েছে। এটা কারো দ্বারা প্রভাব বিস্তারের ফল বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।”

এবিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোটের ঘণ্টা দুয়েক বাকী আছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক আছে।

“প্রার্থীরা কোনো অভিযোগ দিলে সেটার জন্য আমরাতো আছি। এর বাইরে কেউ কোনো অভিযোগ করে থাকলে আমরা সন্তুষ্ট হবো না।”

সাখাওয়াতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ওনাকে এসএমএসও করেছি। কোনো বিষয়ে যোগাযোগে ‘ফিল ফ্রি’। আইনগত ব্যাপারওতো আছে। কোন অভিযোগতো আমরা পাইনি।”