আইভীর ধারাবাহিকতা, না সাখাওয়াতে পরিবর্তন?

নির্বাচন কমিশনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন; আশঙ্কার কিছু দেখছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; এখন ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় নারায়ণগঞ্জ নগরবাসী।

মাসুম বিল্লাহসুলাইমান নিলয়, ও মজিবুল হক পলাশবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2016, 06:29 PM
Updated : 21 Dec 2016, 07:29 PM

রাজধানীর কাছের এই সিটি করপোরেশনে কি সেলিনা হায়াৎ আইভীই থাকবেন মেয়রের চেয়ারে; নাকি সেই ধারায় ছ্দে টেনে নগর ভবনে যাবেন সাখাওয়াত হোসেন খান- পৌনে পাঁচ লাখ ভোটার বৃহস্পতিবার ব‌্যালটে সেই রায় দেবেন।

এতদিন নির্দলীয় প্রার্থী হয়ে চেয়ারম‌্যান এবং তারপর মেয়রের দায়িত্ব চালিয়ে আসা আইভী এবার দলের নৌকায় উঠে তার উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে ফের ভোট চাইছেন।

অন‌্যদিকে জনপ্রতিনিধি হতে প্রথম ভোটে নেমে শিল্প নগরীটিতে ১৩ বছরের মুখ বদলের আহ্বান জানিয়ে আসছেন সাত খুনের আইনজীবী হয়ে পরিচিতি পাওয়া সাখাওয়াত।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এই নির্বাচন দুই প্রধান দলের মর্যাদার লড়াইয়েও রূপ নিয়েছে এরই মধ‌্যে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে আইভীর জয় হলে তা সরকারের কাজের প্রতি জনগণের সমর্থনের প্রকাশ ঘটবে। অন‌্যদিকে নারায়ণগঞ্জের ভোটে সরকারের বিরুদ্ধে জনরায়ের আশায় আছে বিএনপি।

গতবারের শেষ মুহূর্তে বর্জনের কারণে এবার শেষ পর্যন্ত ধানের শীষের প্রার্থী থাকবে কি না, তা নিয়ে নৌকা সমর্থকরা সংশয়ী হলেও বিএনপি ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ভোটের শেষ দেখে ছাড়বে তারা।

গত ৫ ডিসেম্বর প্রচার শুরুর পর ভোটের মাঠে উত্তেজনা ছড়ালেও গোলযোগ ছাড়াই প্রার্থীদের দ্বারে দ্বারে ঘোরা শেষ হয়েছে।

ভোটের একদিন আগে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে নারায়ণগঞ্জে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা তারা দেখছে না।

এই নারায়ণগঞ্জে এখন ভোটের উৎসব

সেনা মোতায়েনের দাবি প্রত‌্যাখ‌্যাত হওয়ার পর বিএনপি শঙ্কা প্রকাশ করছে, ‘আজ্ঞাবহ’ ইসির সহায়তায় কারচুপির মাধ‌্যমে জনরায় ছিনিয়ে নিতে পারে সরকারি দল।

সে বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলছেন, নিজেদের মেয়াদের শেষ নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ‌্য করতে বর্তমান কমিশন বদ্ধপরিকর।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভোটে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কাকে বিএনপির কথার কথা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন যেমন ইমেজ রক্ষায় সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে; তেমনি প্রার্থীদের সৌহার্দ্যপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশে সুন্দর নির্বাচনের আভাস মিলছে।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ব‌্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। দখল-অভিযোগের মধ্যে ব্যাপক সমলোচিতও হয় নির্বাচন ব্যবস্থাপনাও।

স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর নারায়ণগঞ্জ দিয়েও প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ২০১৬

>> ভোট চলবে বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

>> ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। তাদের মধ‌্যে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন পুরুষ; লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন নারী।

>> একজন মেয়র, ৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং ২৭টি ওয়ার্ডের জন‌্য একজন করে কাউন্সিলর বেছে নেবেন তারা।

>> তিন পদের জন্য ব্যালট ছাপানো হয়েছে ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৩টি।

>> মেয়র পদের ব‌্যালট সাদা, যেখানে প্রার্থীর নামও প্রতীক থাকবে। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের গোলাপী ও কাউন্সিলর পদের সবুজ ব‌্যালটে কেবল প্রার্থীর মার্কা থাকবে।  

>> ১৭৪ কেন্দ্রের ১৩০৪টি কক্ষে এসব ব্যালটে রায় জানাবেন ভোটাররা।

কেন্দ্রে সামগ্রী, নিরাপত্তায় বিজিবিও

ভোটগ্রহণ এবং গণনা ও ফল ঘোষণা সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৯ হাজার সদস্য রয়েছেন ভোটের নিরাপত্তায়। এর মধ‌্যে রয়েছেন বিজিবি সদস‌্যরাও।

৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন ভোটারের এ নগরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তিন থানার ১৭৪টি কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বুধবার বেলা ১১টায় শহরের আদালতপাড়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা শুরু হয়।

স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, প্যাড, সিল, অমোচনীয় কালিসহ অন্যান্য উপকরণ পুলিশি পাহারায় পাঠানো হয়েছে ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রে।

এই ব‌্যালট বাক্সেই হবে ভোটগ্রহণ

এসব সরঞ্জামের মধ্যে সুঁই, সুতা, সুপার গ্লু, স্ট্যাপলার,ভোটার তালিকা, কার্বন পেপার, মোমবাতি, স্কেল, কলমসহ ৬০টির বেশি উপকরণ রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।”

ব্যালটে ’অবৈধ’ হাত পড়লে গুলি চালানোর নির্দেশনা আছে বলেও জানান তিনি।

ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বুধবার সকাল থেকে মাঠে দেখা গেছে র‌্যাবের ডগ স্কোয়ার্ড ও বোমা নিস্ক্রিয়করণ ইউনিট। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে চলছে তল্লাশি।

যানবাহনে র‌্যাবের তল্লাশি

পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি র‌্যাবের ৬০০ সদস্য এ নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নরেশ চাকমা জানিয়েছেন।

জয় দেখছে দুদলই

সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ পরিচালনার অভিযোগ করে আসা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আশা করছেন ‘নীরব ভোট বিপ্লবের’।

প্রচারে নামার সুযোগ থাকার পরও তা গ্রহণ করতে ব‌্যর্থ হওয়া খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, “বিএনপি ও ধানের শীষের পক্ষে নারায়ণগঞ্জে ইতোমধ্যে যে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, আমার আবেদন ভোটের বাক্সে এই সমর্থনের প্রতিফলন ঘটান। আমি আশা করি, আপনারা নারায়ণগঞ্জে ২২ ডিসেম্বর নীরব ভোট বিপ্লব ঘটাবেন।”

ধানের শীষ হাতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার দুই দফা সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন, ধানের শীষের প্রার্থীর ভোট বর্জনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে এবং তা করছে ক্ষমতাসীনরা।

বিএনপি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবে ঘোষণা দিয়ে গুজবে কান না দিতে ভোটার ও দলের এজেন্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রী ও এমপিদের ভোটের প্রচারে নামার সুযোগ না থাকলেও কেন্দ্র থেকে দল পাঠিয়েছিল আওয়ামী লীগ।   

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, উন্নয়নের জোয়ার আর সাংগঠনিক শক্তি- এ তিনের সমন্বয়ে নৌকা প্রতীকই বিজয়ী হবে নারায়ণগঞ্জে।

নৌকায় প্রচারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী

ভোট কারচুপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলছেন, “নির্বাচনের আগেই হেরে যাওয়ার একটা প্রবণতা কেন জানি তাদের (বিএনপির) মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তারা জিতলে সঠিক, না জিতলে খারাপ।”

গতবার নির্দলীয় নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতার আশীর্বাদপুষ্ট এ কে এম শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে হারানো আইভীকে প্রচারে দলের চেয়ে নিজের কাজের ফিরিস্তিই বেশি দেখা গেছে।

শেষ নির্বাচনে মরিয়া ইসি

বিদায়ী কমিশনের শেষ নির্বাচনটি উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেছেন, “বর্তমান ইসির এটা শেষ নির্বাচন; ভালো নির্বাচন করতে কমিশন আন্তরিক। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে অবশ্যই। যারা ভায়োলেন্স করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে। কারও ব্যর্থতার জন্য নির্বাচন বিঘ্নিত হলে সে যেই হন, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠনের মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, “নারায়ণগঞ্জের ভোটে আমরা জাতীয় নির্বাচনের আবহ দেখতে পাচ্ছি। বড় দুই দলের জাতীয় নেতারা মাঠে গিয়েছেন, অথচ কোনো বাধা-হামলা ঘটেনি। প্রচারে এ পর্যন্ত নেতিবাচক তেমন কিছুও দেখিনি। সব মিলিয়ে বছর শেষে ভালো নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলা যায়।”

ভোটের আগে টহলে বিজিবি

বর্তমান কমিশনের অধীনে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপিতে যে সহিংসতা হয়েছে তার সঙ্গে তুলনা করলে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ‘অনেক ভালো’ হওয়ার প্রত‌্যাশা জাগাচ্ছে বলে আবদুল আলীম মনে করেন।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম‌্যান অধ‌্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মনে করছেনন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-দল-ভোটারদের মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে নারায়ণগঞ্জের ভোটে।

“এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশে সুন্দর নির্বাচনেরই আভাস দিচ্ছে। প্রধান দুই দলের মনোভাবও ইতিবাচক। আশা করি, আগের সব নির্বাচনের চেয়ে ভালো নির্বাচন হবে এবার। বিদায়ের আগে বর্তমান কমিশনের জন‌্যও নারায়ণগঞ্জের ভোট একটি চ‌্যালেঞ্জ; তারা ভালো নির্বাচন করারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।”

দলীয়ভাবে সিটি নির্বাচন করাকে একটি ‘চ‌্যালেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করে রিটার্নিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “এ জন‌্যে সুন্দর ভোট আয়োজনে সব ব‌্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলগুলোও একটা ভালো নির্বাচন দেখবে আশা করি।”

নারায়ণগঞ্জের সব এলাকার চিত্র এখন এমনই

ইসির এ উপ সচিব জানান, বছর শেষে বর্তমান ইসির শেষ সময়ে ‘ইমেজ’ রক্ষায় তৎপর রয়েছেন তারা।

“গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভালো নির্বাচন হওয়া জরুরি। আমরাও ২২ ডিসেম্বর এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে চাই যেখানে দলের মধ‌্যে গভীর আশার সৃষ্টি হবে। তাদের প্রত‌্যাশা পূরণের পাশাপাশি অবিস্মরণীয় একটি ভোট দেখাতে চাই।”

দিনভর বাড়িতে আইভী

টানা ১৬ দিন প্রচার-প্রচারণা শেষে ভোটের আগের বাড়িতেই কাটিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী। বাড়িতে নেতা-কর্মীদের সময় দিয়েছেন তিনি। ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রে নিয়োগকৃত পোলিং এজেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবকদের নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। বাড়ির দোতলায় নৌকা মার্কার প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক আমিনুর রহমানসহ অন‌্যদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন।

শহরের দেওভোগের ওই বাড়িতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীরা দেখা করতে গেলে সাক্ষাৎ দেননি আইভী। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসার দোতলা থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা দোয়া করবেন যেন সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হতে পারি।”

পরে তিনি বলেন, “আমি জিতব এবং গতবারের চেয়ে এবার বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতব আশা করি।”

আইভীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক আমিনুর রহমান বলেন, “আমরা আগে থেকেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের সকল বুখে আমাদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ মঙ্গলবারই শেষ হয়েছে।”

“নৌকায় গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কাল ভোটের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে এবং নৌকা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতবে,” বলেন তিনি।

আইভীর বাবা আলী আহমদ চুনকা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম‌্যান। ১৯৬৬ সালের ৫ জুন জন্ম নেওয়া আইভী একজন চিকিৎসক। আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের নারায়ণগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক তিনি।

প্রচারে গিয়ে সেলফির আবদার মেটাচ্ছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী

১৯৯২ সালে রাশিয়ার ওডেসা পিগারভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) ডিগ্রি নেওয়ার পর মিডফোর্ড হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করেন আইভী।

এরপর ১৯৯৪ সাল থেকে এক বছর নারায়ণগঞ্জের ২০০ শয্যা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর উচ্চতর পড়াশোনা করতে আইভী যান নিউজিল্যান্ডে।

সেখান থেকে ২০০২ সালে ফিরে পরের বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে প্রথম নারী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তিনি।

নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করা আইভী এখন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

আইভী ও তার স্বামী কাজী আহসান হায়াতের দু’টি ছেলে রয়েছে।

সাখাওয়াত মিডিয়াসেলেও

বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত বুধবার বেলা ১২টার দিকে মিডিয়া সেলে আসেন। সেখানে বসেই বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থক-পোলিং এজেন্টদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। ভোটার লিস্ট বিতরণ করেন। কয়েক দফা সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।

সাখাওয়াত সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সন্তোষজনকভাবে আমরা সব কাজ শেষ করেছি।

“সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি এইটুকুই বলতে চাই, অনেক আশা নিয়া নারায়ণগঞ্জবাসী তাকিয়ে আছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এখন আমরা আশা নিয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছি, তারা একটি ‍সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ভোটের ফল না মানার কী আছে। সুষ্ঠু হলে ভোটের ফল মানব।”

পেশায় আইনজীবী সাখাওয়াতের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে হলেও অনেক দিন ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা।

১৯৬৯ সালের ২০ অগাস্ট জন্ম নেওয়া সাখাওয়াত ১৯৯৫ সালের ১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা বারে তালিকাভুক্ত হন। স্থায়ীভাবে বসত গড়েন নগরীর জামতলা এলাকায়।

ভোটারদের মন জয়ে সাখাওয়াত হোসেন খান

২০০৬-০৭ সালে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি জেলা বারে সভাপতি ছিলেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে সাত খুনের ঘটনায় সরব হয়ে পরিচিতি পান সাখাওয়াত।

১৯৯৮ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য হন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-আইন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর‌্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন।

আইভীর ভোট ১৬ নম্বরে, ১৩ নম্বরে সাখাওয়াতের

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভীর নির্বাচনী মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, ১৬ নম্বরে পশ্চিম দেওভোগ এলাকার শিশুবাগ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন নৌকার প্রার্থী।

সকাল সাড়ে ৯টায় ১০৬ নম্বর এই কেন্দ্রে তার ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে বলে তার প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক আমিনুর রহমান জানিয়েছেন।

বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত ভোট দেবেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে।

সকাল ৮টায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছে তার নির্বাচনী মিডিয়া সেল।

এক সঙ্গে সব মেয়র প্রার্থী

আইভী ও সাখাওয়াত ছাড়াও মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি এজহারুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি মাছুম বিল্লাহ।

ব‌্যালটে নাম থাকলেও বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থনের জানিয়েছেন এলডিপির কামাল প্রধান এবং কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস।

২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ১৫৬ জন, আর ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৮ জন প্রার্থী।