বিদেশি চ‌্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধ হচ্ছে, আন্দোলন স্থগিত

বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশি টেলিভিশন চ‌্যানেলে দেশি পণ‌্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছে মিডিয়া ইউনিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2016, 03:42 PM
Updated : 3 Dec 2016, 04:14 PM

শনিবার ঢাকা ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন মিডিয়া ইউনিটির আহ্বায়ক ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু।

বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে দেশের টাকা ‘অবৈধভাবে’ বিদেশে ‘পাচার’ হয়ে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে তা বন্ধের দাবিতে গত ৫ নভেম্বর আন্দোলন শুরু করে মিডিয়া ইউনিটি।

সাংবাদিক, ক্যামেরাপারসন, অভিনয় শিল্পী, নাট্যকর্মী, অনুষ্ঠান নির্মাতা, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, প্রযোজক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগকারী, ব্রডকাস্টারদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল মিডিয়া ইউনিটি।

মোজাম্মেল বাবু বলেন, “আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। আমরা আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি।”

ওই সংবাদ সম্মেলনেই বিদেশি চ‌্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের ঘোষণা দেন চ‌্যানেল আইয়ের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। বিদেশি চ‌্যানেলে দেশি পণ‌্যের বিজ্ঞাপনের মাধ‌্যমে বছরে ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে যাওয়ার জন‌্য মূলত সাগরের ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড সংশ্লিষ্টদের দুষছিলেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে সাগরকে ‘সাংস্কৃতিক রাজাকার’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে মোজাম্মেল বাবু ও এটিএন বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়।

ওই মামলা প্রত‌্যাহারের ঘোষণা দেন ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির’ অবসান হয়েছে। মামলাটি প্রত্যাহার করে নেবেন তিনি।

তার এই ঘোষণায়ও ক্ষোভ কমেনি মাহফুজুর রহমানের।

সংবাদ সম্মেলনে সাগরের উদ্দেশ‌্যে তিনি বলেন, “আপনার কিছু সাংবাদিক আছে, নিজস্ব পত্রিকা আছে সেখানে আপনি স্বঘোষিত রাজাকার হয়ে গেলেন। নিজে ডিক্লেয়ার করলেন, আপনি রাজাকার। আপনি প্রমাণ করতে পারবেন? আমার কাছে প্রমাণ আছে, ফুটেজ আছে।

“আমি কিন্তু বলি নাই আপনি রাজাকার। বলছি, ৩০ তারিখের মধ্যে সমাধান না হলে আপনাকে উপাধি দেওয়া হবে। কিন্তু আপনি মর্তুজাকে জঘন‌্যভাবে লেখালেন। আপনে যে কাজটি করলেন কেস করলেন। ২৪ ঘণ্টা আমার আর বাবু ভাইয়ের নামে ছবি ছাপিয়ে ‘ধরিয়ে দেন’ এর মতো প্রচার করা শুরু করলেন। আজকে আমাদের ইজ্জত গেল সেটার কী করবেন।”

এজন‌্য ফরিদুর রেজা সাগরকে ক্ষমা চাইতে বলেন এটিএন বাংলার মালিক মাহফুজুর রহমান।

“সাগর ভাই আপনি বলেন, আপনি সেদিন ভুল করেছিলেন, আপনি মাফ চান।”

এই আন্দোলনে যারা যুক্ত হয়েছিলেন তাদের সবাইকে নিয়ে ‘মিডিয়া ইউনিটি’ ক্লাব গঠনের প্রস্তাব দেন মোজাম্মেল বাবু।

“যদি আবারও অন্যায় কিছু ঘটে, তবে আমরা এই ক্লাবের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করব,” বলেন তিনি।

উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, কলাকুশলী, নির্মাতা, শিল্পী, বিজ্ঞাপনদাতা ও দর্শক–শ্রোতাদের এই সম্মিলনকে এক ‘নতুন বিজয়ের দিন’ অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ।

তিনি বলেন, “শিল্পের অস্তিত্বের জন্য আমরা সবাই ঐকমত‌্যে এসেছি, এটা ধরে রাখতে হবে।

“প্রধানমন্ত্রী শিল্পের বিকাশ চান, ঐক্য চান। গণতন্ত্রের বিকাশে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকাশে ইলেকট্রনিক মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এটি প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছা।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও মিডিয়া ইউনিটির আন্দোলনের প্রতি ‘সংবেদনশীল’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট রিটেনশন অ্যাকাউন্টের সুবিধা নিয়ে বিদেশে বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের কর্ণধার সালমান এফ রহমান বলেন, “যে দেশে আমি পণ্য রপ্তানি করছি, সে দেশের টিভিতে যদি আমার বিজ্ঞাপন দেখাতে চাই, তাহলে আমাকে অনুমতি দেওয়া উচিত। এটাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার। এই সার্কুলারে ফাঁক ছিল। সেই ফাঁক গলে অ্যাডভানটেজ নিয়ে সে কাজটা হয়েছে। আমরা চাই সার্কুলার বাতিল করা হোক।”

তিনি বলেন, “বিদেশি চ‌্যানেলের বাংলাদেশের ফিডে যে বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে, তাতে কিন্তু কেউ এক্সপোর্ট রিটেনশন অ্যাকাউন্ট ইউজ করতে পারবে না। এটা নিয়ে একমত হয়েছি অ্যাটকো সদস্যরা। বিদেশি চ্যানেলগুলোকেও বলে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন তারা দেখাতে পারবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক আলী ফালু, নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী নঈম নিজাম, এসএ টিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, দেশ টিভির উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, এশিয়ান টিভির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজসহ অন‌্যরা উপস্থিত ছিলেন।