বিয়ের বয়স শিথিলের উদ‌্যোগ আটকান: সাংসদদের এইচআরডব্লিউ

বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স সীমা শিথিলের সুযোগ রেখে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’পাস না করতে বাংলাদেশের আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2016, 06:25 AM
Updated : 2 Dec 2016, 06:32 AM

আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া ওই আইন পাস হলে তা মেয়েদের আরও বেশি বাল্যবিয়ের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে। রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ওই বিল বাতিল করা সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব।  

গত মাসে মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’এর খসড়ায় ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এবং বাবা-মায়ের সমর্থনে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশের নারী অধিকার, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনগুলো এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। প্রস্তাবিত আইনের ওই বিশেষ ধারা বাতিলের দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশও হয়েছে। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) উইমেন রাইটস বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক হিদার বার শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, সরকারের ওই উদ্যোগ বাংলাদেশকে বহু পেছনে ঠেলে দেবে।

ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছর বয়স হওয়া আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়।

ওই আইন পাসের উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে হিদার বার বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সীদের বিয়ে বন্ধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছিলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ২০১৮ সালের মধ্যে আঠারোর কম বয়সীদের বিয়ে বন্ধ করা হবে।    

এরপর দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কোনো কর্ম পরিকল্পনা হয়নি, বরং ভুল পথে পা বাড়িয়ে বাংলাদেশ সরকার মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বিয়ের বয়স শিথিল করার সুযোগ দিতে চাইছে।

প্রস্তাবি আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”

নতুন আইনের খসড়ায় ২১ বছরের কম বয়সী ছেলে ও ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ বলা হলেও আইন শিথিলের সেই বিশেষ প্রেক্ষাপটে ক্ষেত্রে ন্যূনতম কোনো বয়সের কথা বলা হয়নি।

এই বিধান যুক্ত করার যুক্তিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, “আমাদের দেশে তো ১০-১১ বছরেও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। এ সমস্যাগুলো আছে তো, এটার জন্য একটা ব্যবস্থা।”

সরকারের এই যুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, এ থেকে মনে হচ্ছে, ধর্ষণের কারণে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে তাকেও ওই আইন দেখিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা হতে পারে।

খসড়া আইনে বাল্যবিবাহে বন্ধে ‘কঠোর’ শাস্তির কথা বলা হলেও অপ্রাপ্তবয়স্করা বিয়ে করলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধানকে যথেষ্ট বলে মনে করছে না এইচআরডব্লিউ।

হিদার বার বলছেন, এই আইন পাস হলে ওই ১৫ দিনের আটকাদেশের মধ্য দিয়েই কিছু বাল্যবিয়ে বৈধতা পেয়ে যাবে, যা বর্তমান আইনের চেয়েও বড় দুর্বলতা তৈরি করবে। 

“আইন শিথিল করা হলে বাল্য বিয়ে বন্ধের লড়াইয়ের পথে তা হবে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এই আইন সারা দেশে অভিভাবকদের এই বার্তা দেবে যে, অন্তত কিছু ক্ষেত্রে সরকার বাল্য বিয়েকে যৌক্তিক মনে করছে।”