‘তদন্তের গাফিলতিতে’ রীড ফার্মার সবাই খালাস

ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সাত বছর আগে রীড ফার্মাসিউটিক‌্যালসের বিরুদ্ধে করা মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2016, 06:14 AM
Updated : 28 Nov 2016, 12:23 PM

ঢাকার ঔষধ আদালতের বিচারক আতোয়ার রহমান সোমবার এই রায় ঘোষণা করে বলেন, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার ‘অযোগ‌্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব‌্যর্থ হয়েছে।

পাঁচ আসামির মধ‌্যে রীড ফার্মার মালিক মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

অন‌্য তিন আসামি কোম্পানিটির পরিচালক আব্দুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক পলাতক।

২০০৯ সালের জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত রীড ফার্মার প্যারাসিটামল সিরাপ পানে সারাদেশে ২৮ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠলে ১০ অগাস্ট ঢাকার ঔষধ আদালতে এ মামলা হয়।

তৎকালীন ড্রাগ সুপার শফিকুল ইসলাম মামলা করার পর সেদিনই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম সঠিক নিয়ম মেনে জব্দ তালিকা এবং পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেননি। মামলা দায়েরের সময় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ ছিল, তা না নেওয়ায় তার অযোগ‌্যতা ও অদক্ষতা প্রমাণিত হয়।”

মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, রীড ফার্মার প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদানের কারণে শিশু মৃত‌্যুর ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলেন, ওই প্যারাসিটামলে ডাই ইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যায়নি। তবে ওই ওষুধ ছিল নিম্নমানের।

আলোচিত এ মামলার বিচারকালে বাদী শফিকুল ইসলাম, ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক এ আর খান, একই হাসপাতালের উপ-পরিচালক এইচ এস কে আলম, ঔষধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন, একই অধিদপ্তরের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবের সহকারী বিশ্লেষক মো. আবু বকর সিদ্দিক রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন।

আসামিদের পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার জাহিদ ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “রায়ে উল্লেখ করা হয়, মামলায় প্যারাসিটামলে যে বিষাক্ত পদার্থের কথা বলা হয়েছিল, তা পাওয়া যায়নি। শিশু মৃত্যুর জন্য যে প্যারসিটামল পান করানো হয়েছিল তাকে দায়ী করা হয়নি।”

এছাড়া ওষুধের যে নমুনা তখন ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন উপ-পরিচালক উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলেন, তাও ১৯৪০ সালে ওষুধ আইনের নিয়ম মেনে করা হয়নি বলে আসামিদের খালাস দেন বিচারক, বলেন এই আইনজীবী।

রায়ে বিচারক আতোয়ার রহমান বলেন, ওষুধের নমুনাকে চারভাগে ভাগ করে এক ভাগ আদালতে, এক ভাগ বিশ্লেষককে (এনালিস্ট), এক ভাগ আসামিকে এবং আরেক ভাগ মামলা দায়েরকারী কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রাখতে হয়।

“কিন্তু এ মামলায় উদ্ধার করা রীড ফার্মার প্যারাসিটামলে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এবং উদ্ধারকরা এ ওষুধ রীড ফার্মার কি না, সে সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে। এ কারণে আসামিদের খালাস দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

এর আগে ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের অন্যতম মালিক, ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয় এই আদালত।

একই আদালত ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ১৯৯২ সালে ৭৬ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঔষধ আইনে করা আরেকটি মামলায় বিসিআই ফার্মার ছয় কর্তাব্যক্তিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়।

রীড ফার্মার মালিক মিজানুর এই মামলাটিকে হয়রানিমূলক দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ন‌্যায়বিচার পেয়েছি।”

এই মামলার জন‌্য ব‌্যবসায় ধস নেমেছে বলে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলাও করতে পারেন বলে জানান মিজানুর।

তবে এই কোম্পানিটির ওষুধ মানসম্পন্ন নয় বলে বাজার থেকে তুলে নিতে সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশও আসে। সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ঔষধ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নাদিম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর রাজি হয়, তবে আমরা আপিলে যাব।”

২০০৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রীড ফার্মার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা হয়।

মিজানুর রহমান ওই বছরের ১২ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করলে ঢাকার তৎকালীন জজ এ এন এম বশিরউল্লাহ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শিউলি হাই কোর্ট থেকে জামিন পান।