প্রশাসন ক্যাডারে কোটারও বেশি পদোন্নতি

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত সংখ্যককে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2016, 01:35 PM
Updated : 27 Nov 2016, 01:35 PM

রোববার ২০৫ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে সরকারের উপসচিব করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্য ২৬ ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র ৪৮ জন।

‘সরকারের উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা-২০০২’ অনুযায়ী, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ২৫ শতাংশ পদ নির্দিষ্ট করা আছে।

কিন্তু উপসচিব পদে পদোন্নতির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নির্ধারিত ৭৫ শতাংশ কোটার সীমা পার করে ৭৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডার বাদে অন্য ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তারা ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

যা আছে পদোন্নতি বিধিতে

উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ পদ নির্ধারিত আছে। বাকি ২৫ শতাংশ পদে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পদায়ন করা হবে।

# শর্ত ১

সিনিয়র স্কেল পদে ৫ বছরের চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে অন‌্যূন ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা পেয়েছেন এমন কর্মকর্তার ক্ষেত্রে ৫ বছরের চাকরির শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

# শর্ত ২

সরকার নির্ধারিত বুনিয়াদি ও বিভাগীয় প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে শেষ করতে হবে এবং আইন ও বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে কোনো কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণের সুযোগ না দিলে তার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত এই বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য হবে না।

# শর্ত ৩

মূল্যায়ন নম্বরের অন্যূন ৮৫ নম্বর পেতে হবে। তবে শূন্যপদে পদোন্নতিতে যদি উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তার আগের দুটি শর্তানুযায়ী প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকে এবং তার প্রাপ্ত নম্বর ৮৫’র কম হয় তাহলে তার সর্বনিম্ন মুল্যায়ন নম্বর শিথিল করা যাবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ২৫ নম্বর, বিগত ৫ বছরের বার্ষিক বা গোপনীয় প্রতিবেদনের গড়ের জন্য ৩০ নম্বর, চাকরি জীবনের শুরু থেকে বিগত ৫ বছরের আগ পর্যন্ত সব বছরের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের গড়ের জন্য ২৫ নম্বর, সামগ্রিক চাকরি জীবনে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে কোনো বিরূপ মন্তব্য না থাকার জন্য বোনাস নম্বর হিসেবে ১০ এবং সামগ্রিক চাকরি জীবনে কোনো শাস্তি না থাকার জন্য ১০ নম্বর মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে মূল্যায়ন হয়।

পদোন্নতিতে নির্ধারিত কোটা রক্ষা না করায় বেশ কয়েকটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্ষোভ জানালেও কেউ নাম-পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি।

এদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৬টি ক্যাডারের মধ্য থেকে উপসচিবের ২৫ শতাংশ পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিধান থাকলেও কোন ক্যাডার থেকে কতজনকে পদোন্নতি দেওয়া হবে সে বিষয়ে প্রকাশিত কোনো গাইডলাইন নেই।”

প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে রোববার শিক্ষা ক্যাডার থেকে ১৫ জন এবং কৃষি ক্যাডার থেকে ছয়জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তথ্য ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন একজন।

তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা বলেন, “পদোন্নতি কীভাবে দিল, কেন শিক্ষা ক্যাডার থেকে ১৫ জনকে দেওয়া হল- সেসব বিষয়ে কারও সঙ্গেই কথা বলার উপায় নেই। যাদের সঙ্গে কথা বলতে যাব তাদের দখলেই তো সব।”

পদোন্নতিতে কোটা না মানার বিষয় নিয়ে রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলেননি।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যেসব কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য বিবেচনার দাবি রাখেন তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

এবারও নানা কারণে অনেকেই বাদ পড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “(পদোন্নতি দিতে) আমাদের একটা হিসাব আছে, তার মধ্যে তাদেরকে রাখা যায়নি।”

পদোন্নতিতে এগিয়ে ডিসিরা

উপসচিব থেকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ১৮৬ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১১ জনই জেলা প্রশাসক (ডিসি)।

নরসিংদীর ডিসি আবু হেনা মোর্শেদ জামান, সুনামগঞ্জের ডিসি শেখ রফিকুল ইসলাম, রাজশাহীর ডিসি কাজী আশরাফ উদ্দিন, টাঙ্গাইলের ডিসি মো. মাহবুব হোসেন, নোয়াখালীর ডিসি বদরে মুনীর ফেরদৌস, যশোরের ডিসি মো. হুমায়ুন কবীর, মানিকগঞ্জের ডিসি রাশিদা ফেরদৌস, মাগুরার ডিসি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সিলেটের ডিসি মো. জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রামের ডিসি মো. সামছুল আরেফিন এবং ঝালকাঠির ডিসি মো. মিজানুল হক চৌধুরী যুগ্ম-সচিব হয়েছেন।

এগিয়ে শীর্ষকর্তাদের পিএসরা

বরাবরের মতো এবারও মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সচিবদের একান্ত সচিবদের (পিএস) মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়ার তালিকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদেরও প্রাধান্য রয়েছে।

 প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কে এম আলী আজম ও শেখ ইউসুফ হারুন অতিররিক্ত সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকদের মধ্যে মো. খলিলুর রহমান, নীলিমা আক্তার ও নাসরীন আফরোজ যুগ্ম-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর একান্ত সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহীম, জনপ্রশাসনমন্ত্রীর একান্ত সচিব এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর একান্ত সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-সচিব হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার একান্ত সচিব অতুল সরকার, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব নেওয়াজ হোসেন চৌধুরী, মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, ভূমি প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস পদোন্নতি পেয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবের একান্ত সচিব মো. শওকত আলী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের একান্ত সচিব মনির হোসেন চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবের একান্ত সচিব মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন খান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিব সৈয়দ আলী আহসান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিবের একান্ত সচিব মো. রায়হান আখতার, শিল্প সচিবের একান্ত সচিব মো. কামরুল হাসান, বাণিজ্য সচিবের একান্ত সচিব সৈয়দ মুহাম্মদ কাওছার হোসেনকেও পদোন্নতি দিয়েছে সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব রাজা মুহাম্মদ আব্দুল হাই, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব এস এম হুমায়ুন কবির সরকার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, আরেকটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব সোনা মনি চাকমাও পদোন্নতি পেয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব কবীর মাহমুদ, প্রধান তথ্য কমিশনারের একান্ত সচিব হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন, জাতীয় সংসদের হুইপের একান্ত সচিব মো. আসিফ আহসানকে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার।