নাইপলের হাত দিয়ে পর্দা উঠল ‘ঢাকা লিট ফেস্টের’

বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বিশ্বময় পরিচিত করার লক্ষ‌্য নিয়ে শুরু হল ষষ্ঠ ঢাকা লিট ফেস্ট, যার উদ্বোধনে ছিলেন নোবেলজয়ী সাহিত‌্যিক ভি এস নাইপল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2016, 10:10 AM
Updated : 17 Nov 2016, 10:10 AM

২০০১ সালে সাহিত‌্যে নোবেলজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই সাহত্যিক বলেন, “ঢাকা এসে খুব ভালো লাগছে আমার। উৎসব উদ্বোধন করেও আমি আনন্দিত।”

বৃহস্পতিবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এ উৎসব উদ্বোধনে নাইপলের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ছিলেন।

নোবেলের আগে বুকার পুরস্কারজয়ী নাইপল উদ্বোধনের সময় খানিকটা রসিকতা করে বলেন, “আমি বোধহয় এবারও তাড়াতাড়ি ফিতা কেটে ফেলেছি। ফিতা তো কাটলাম। এখন আমার হয়ে কেউ বক্তৃতাটা দিক।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায ও আহসান আকবর।

সাহিত‌্যপ্রেমী মুহিত বলেন, “ঢাকা লিট ফেস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহিত্য যেমন বিশ্ব দরবারে উপস্থাপিত হচ্ছে, তেমনি ঢাকা ট্রান্সলেশন সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহিত্য অনূদিত হচ্ছে।

“এই উৎসবে বাংলাদেশের সাহিত্যকে যেমন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরছি আমরা, তেমনিভাবে বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গেও আমাদের যোগ ঘটছে।”

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর গত বছরের লেখক-প্রকাশকদের উপর জঙ্গি হামলার দুঃসময় পেরিয়ে এই উৎসব শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন।

“এ উৎসবটি তরুণ সাহিত্যিকদের জন্য একটি দারুণ সুযোগ, কেননা এখানে এসে তারা নিজেদের অভিমত, অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন।”

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোর কথা স্মরণ করেন।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে কাজী আনিস আহমেদ ধন্যবাদ জানান বিদেশি অতিথি ও উপস্থিত সকলকে। পাশাপাশি লিট ফেস্টের আকর্ষণগুলো তুলে ধরেন তিনি।

উৎসব সমন্বয়ক সাদাফ তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের দুই হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে উৎসবটিতে সেসব ঐতিহ্যবাহী লোকসাহিত্যের গানগুলোকে স্থান করে দেওয়ার কথা জানান।

৯০টি অধিবেশনে সাজানো এ সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয় ১৫টি অধিবেশন। এছাড়াও ছিল সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক স্মরণে নাট্য প্রদর্শনী। তার ‘নীল দংশন’ নাটকটি ‘ব্লু ভেনম’ শিরোনামে ইংরেজি অনুবাদে মঞ্চস্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নায়লা আজাদ নূপুর। এতে অভিনয় করেছেন আরিফ সৈয়দ ও আরিক আনাম খান।

দেখানো হয় ভি এস নাইপলকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র। এছাড়াও প্রদর্শিত হয় জয়া আহসান অভিনীত চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসার শতহর’। উন্মুক্ত মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন মেহেদী হাসান হাসান নীল তার দল। ছিল কবিতা আবৃত্তিও। 

১২টায় একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে লনে মেহেদি হাসান ও তার বন্ধুরা সঙ্গীত পরিবেশন করে। একই সময় কসমিক টেন্টে প্রদর্শিত হয় জয়া আহসান অভিনীত ও ইন্দ্রনীল রয় পরিচালিত চলচ্চিত্র ভালোবাসার শহর।

বেলা ১টায় মূল মঞ্চে বিশ্ব সাহিত্য নিয়ে ‘ওয়ার্ল্ড ফিকশন: হিডেন রিয়েলিটি’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ড্যানিয়েল হান, নিকোলাস লেজার্ড ও আনজুম হাসান ও নায়েল এলতোখি।

কেকে টি স্টেজে ইমাজিনিং হিস্টোরি শীর্ষক আলোচনায় সাদ জেড হোসাইনের সঞ্চালনায় অংশ নেন সাজিয়া ওমর ও বাপ্পাদিত‌্য চক্রবর্তী। এ সময় ব্যান্ড তারকা মাকসুদুল হক স্টিভেন পাওলার লনে কবিতাপাঠ করেন।

বেলা ২টায় প্রধান মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকার বৈশিষ্ট্য বিষয়ক আলোচনা। এতে অংশ নেন ভারতের এনডিটিভির প্রধান সম্পাদক সাংবাদিক বারখা দত্ত, মার্কিন কবি জেফরি ইয়াং বেন জোদাহ ও আরব সাহিত্যের কিউরেটর মার্সিয়া লিন্যাক্স কিউলি।

একই সময় দেশের জিন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী কে কে টি স্টেজে নিওরোসায়েন্সের অ্যাসথেটিক্স বিষয়ে আলোচনা করেন।

এ সময় লনে সাম্প্রদায়িকতার এপার ওপার নিয়ে আলোচনা করেন শামসুজ্জামান খান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি জহরসেন মজুমদার, অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান, পশ্চিমবঙ্গের প্রাবন্ধিক সেমন্তী ঘোষ ও আহমেদ রেজা। এসময় ব্র্যাক স্টেজে অনুষ্ঠিত হয় ক্রাইম পেইজ দ্যা আর্ট অব সাসপেন্স শীর্ষক অধিবেশন।

বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল আলম আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বিষাদ সিন্ধুর বিশেষ অনুবাদ। সেসময় লনে কবিতা পাঠ করেন বাংলাদেশি কবিরা। 

সেসময় ব্র্যাক স্টেজে অভিনয়শিল্পী ইরেশ যাকের আলোচনা করেন ভারতের প্রাবন্ধিক অন্তরা গাঙ্গুলির বই তনয়া তানিয়া নিয়ে। এসময় বটতলায় ছিল আবৃত্তি পরিষদের কবিতা আবৃত্তি।

এদিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অধিবেশনে দেখানো হয় ভিএস নাইপলের ওপর নির্মিত বিশেষ ডকুমেন্টারি দ্যা স্ট্রেঞ্জ লাক অব নাইপল। এটি প্রদর্শিত হয় কসমিক টেন্টে।

বিকালে মূল মঞ্চে বারখা দত্তের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উৎসব পরিচালক সাদাফ সায। আলোচনার বিষয় ছিল বারখা দত্ত রচিত আলোচিত গ্রন্থ ‘দ্য আনকোয়াইট ল্যান্ড’।

একই সময় ভ্রমণপিপাসু অস্টেলিয়ান লেখক টিম কোপ কেকে স্টেজে আলোচনায় বসেন তার লেখা ‘জার্নি অ্যান্ড কোয়েস্ট অব ইন ট্রুথ’ বইটি নিয়ে। একই সময় পুলিৎজার বিজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত কবি বিজয় শেষাদ্রি আমেরিকার কবিতা নিয়ে ব্র্যাক স্টেজে আলোচনা করেন জেফরি ইয়াংয়ের সঙ্গে বসবেন ।

একই সময়ে রিচার্ড বিয়ার্ড লাইভ এডিটিংয়ের ওপর কসমিক টেন্টে বিশেষ ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন।

সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় মূল মঞ্চে প্রয়াত সব্যসাচী সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের জীবনী নিয়ে আলোচনা করবেন ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক, কবি সাজ্জাদ শরীফ, সাহিত্যিক আহমেদ মাজহার ও পারভেজ হোসেন। এসময় শামসুল হক রচিত নীল দংশনের একাংশ মঞ্চস্থ হবে মূল মঞ্চে ।

সব শেষে বটতলায় বাউলিয়ানা ঘরানার সঙ্গীত পরিবেশব্রেবেন সঙ্গীত তারকা মাকসুদ হোসেন।

শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু হবে সকাল ১০টায়। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।

তিন দিনের এই সাহিত্য উৎসব চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন ২ শতাধিক শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, সাংবাদিকসহ আরও অনেকে।