নারীরা পিছিয়ে নিজেদের কারণেই: সচিব

রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে নারী-পুরুষের কোনো বৈষম‌্য নেই দাবি করে নারীদের পিছিয়ে থাকার জন‌্য তাদেরই দায়ী করেছেন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।

নিজস্ব প্রতিব্কেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2016, 04:38 PM
Updated : 16 Nov 2016, 05:50 PM

ট্রেড ইউনিয়নসহ নানা ক্ষেত্রে অংশগ্রহণে পিছিয়ে থাকার জন‌্য নারীদের অসচেতনতার দিকটি মুখ‌্য হিসেবে তুলে ধরে এই দায় দেন শ্রম সচিব মিকাইল শিপার।

তিনি বলেন, “নিজের অধিকার বুঝে নিতেও নারীর অনীহা, তারা পিছিয়ে আছে তাদের নিজেদের কারণেই।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘কর্মজীবী নারী’ আয়োজিত ‘উন্নয়ন ভাবনা : নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্তগ্রহণে নারীশ্রমিক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সচিব।

একদিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের অধ‌্যাপক সাদেকা হালিম এক গবেষণা প্রতিবেদনে নারীদের পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে পুরুষপ্রধান সমাজে নানা বঞ্চনার চিত্র পরিসংখ‌্যান দিয়ে তুলে ধরেন।

সচিব মিকাইল শিপার বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা নিশ্চিত তো করা হয়েছেই, এরপর শ্রম আইনের মাধ্যমে সমকাজে সমমজুরি, মাতৃত্বকালীন ছুটির সুবিধা, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ইত্যাদি বিষয় আমরা নিশ্চিত করেছি।”

তবে তার কার্যকারিতা সব ক্ষেত্রে নেই বলে স্বীকার করেন তিনি।

সাদেকা হালিম তার গব্ণোপত্রে পোশাক শিল্পসহ দেশের অর্থনীতির চালকের আসনে থাকা বিভিন্ন খাতে নারীর ব‌্যাপক অংশগ্রহণ হলেও মজুরি বৈষম‌্যের চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, নারীরা খাদ্য উৎপাদনে নিয়োজিত থাকলেও ২০১৫ সালে দেওয়া ১ কোটি ৩৯ লাখ কৃষক কার্ড নারী কৃষকদের কেউ পায়নি। পারিবারিক শ্রমের ব্যবহারিক মূল্য থাকলেও অর্থনৈতিক মূল্য নেই। জিডিপিতেও তা ধরা হয় না। ২০০৫-০৬ সালের হিসাব অনুসারে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার ৭৭ শতাংশ নারী হলেও তাদের কম বেতন পাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

ভূমি ব‌্যবস্থাপনায় নারীদের অবহেলিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জমির ৯৬ শতাংশের মালিকই পুরুষ।

সম্পত্তিতে সমঅধিকারের বিষয়টি এখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উপেক্ষিত থাকার কথাও বলেন সাদেকা হালিম। সেইসঙ্গে নারীর অগ্রযাত্রা রোধে ধর্মীয় ও সামাজিক নানা বাধার কথা বলেন তিনি।

‘কর্মজীবী নারী’র আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পরিবার-কর্মস্থল-সমাজ-রাষ্ট্র সর্বত্রই নারী বৈষম্যের শিকার, যা নারীর নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্তগ্রহণ পর্যায়ে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক।

ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের অর্থনীতির অধ‌্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “নারীরা ঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন, কিন্তু নারীর প্রতি বৈষম্য কমেনি।”

ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সহিদুল্লা চৌধুরী শ্রমিক ফেডারেশনগুলোতে নেতৃত্বে আরও নারীদের আনার উপর জোর দেন।

সচিব মিকাইল শিপার জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বরাদ্দ করা অর্থ শ্রমিকদের জন‌্য ব‌্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে।