রোববারই খুলছে সিটিসেল: বিটিআরসি

দেনার দায়ে বন্ধ রাখা সিটিসেলের তরঙ্গ রোববারই খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2016, 10:59 AM
Updated : 6 Nov 2016, 11:00 AM

রোববার বিকালে বিটিআরসি কার্যালয়ে এক বিশেষ সভা শেষে সংস্থার প্রধান শাজাহান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকের মধ্যে সিটিসেল খুলে দেওয়া হবে। আমাদের একটি টিম সিটিসেল অফিসে যাবে।”

সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও ‘টেকনিক্যাল’ কারণে সময় লাগছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযাগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানানোর ঘণ্টা চারেক পর বিটিআরসি চেয়ারম‌্যানের এ বক্তব‌্য আসে। 

বকেয়া টাকা শোধ না করায় গত ২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ স্থগিত করা হয়। এরপর সিটিসেল কার্যক্রমে ফেরার আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে গেলে গত বৃহস্পতিবার অবিলম্বে তাদের তরঙ্গ খুলে দেওয়ার নির্দেশ আসে সর্বোচ্চ আদালত থেকে।

আপিল বিভাগের আদেশে বলা হয়, আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যে সিটিসেল বকেয়ার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে আবারও তরঙ্গ বন্ধ করে দিতে পারবে বিটিআরসি।

আদালতের ওই আদেশের পর সিটিসেলের সংযোগ ফিরিয়ে দিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করেছে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার রেজা-ই-রাব্বী খন্দকার।

তিনি বলেছিলেন, “আদেশের অনুলিপির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আদেশের পরই আমি বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ফোনে বলে দিয়েছি। বিটিআরসির যা সামর্থ‌্য আছে, তা নিয়ে সংযোগ ফিরিয়ে দিতে তারা কাজ শুরু করেছেন।”

কিন্তু এরপর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তরঙ্গ ফিরে না পেয়ে ফের আদালতে যায় সিটিসেল। তাদের আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারকের বেঞ্চ এ বিষয়ে বিটিআরসির ব্যাখা জানতে চায়।

আদালতের নির্দেশনার পরও সিটিসেলের তরঙ্গ কেন খুলে দেওয়া হয়নি, তা বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে জানাতে বলা হয়।

পরে বিটিআরসির পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ‌্যে শুরু হয়েছে এবং এ বিষয়ে বিকালে মিটিং ডাকা হয়েছে।   

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম(ফাইল ছবি )

এরই মধ‌্যে দুপুরে জিপিওতে বিশ্ব ডাক দিবসের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, “তরঙ্গ খুলে দিতে হলে কয়েকটি পর্যায় এবং টেকনিক্যাল কিছু কাজ আমাদের করতে হয়। বিটিআরসি সেটি শুরু করেছে, যা একটু সময় সাপেক্ষ এবং সেটার জন্য একটু সময় লাগছে।”

আদালতের আদেশের সত‌্যায়িত অনুলিপি এখনও হাতে পাননি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তারপরও আমরা কাজটি চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে একটু সময় আমাদের দিতে হচ্ছে; সার্টিফায়েড কপির জন্যও আমরা অপেক্ষা করছি।”

ঘটনাক্রম

# পৌনে পাঁচশ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধের জন‌্য কয়েক দফা তাগাদা দিয়েও তা না পেয়ে গত জুলাই মাসে সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করার উদ‌্যোগের কথা জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। পরের মাসে সিটিসেলকে নোটিস দেওয়া হয়।

# ওই নোটিসের বিরুদ্ধে সিটিসেল হাই কোর্টে যায়। ২২ অগাস্ট হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, নোটিসের জবাব দিতে বিটিআরসি যে এক মাস সময় দিয়েছিল, ওই সময় পর্যন্ত সিটিসেলকে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

# হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় বিটিআরসি। ২৯ অগাস্ট আপিল বিভাগের আদেশে দেনা শোধের জন‌্য সিটিসেলকে দুই মাস সময় দেয় আপিল বিভাগ। বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, বকেয়া ৪৭৭ কোটি টাকার মধ‌্যে দুই তৃতীয়াংশ প্রথম এক মাসে এবং এক তৃতীয়াংশ পরবর্তী এক মাসে পরিশোধ করতে হবে।

এছাড়া ১৭ অগাস্টের পর থেকে প্রতিদিন বিটিআরসির কাছে পাওনা হওয়া ১৮ লাখ টাকা করে অবিলম্বে পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলে, টাকা না পেলে বিটিআরসি যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে।

# ২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ স্থগিত করে বিটিআরসি। মহাখালীতে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন বিটিআরসি কর্মকর্তারা।

টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সেদিন জানান, একমাসের প্রথম কিস্তিতে নির্ধারিত ৩১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার মধ‌্যে সিটিসেল মাত্র ১৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

# এরপর সিটিসেল তরঙ্গ বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত বা পুনরায় তরঙ্গ বরাদ্দের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়। শুনানি শেষে আদালত ৩ নভেম্বর আদেশের দিন রাখে। ৩ নভেম্বর সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দিতে বলা হয়। 

# ৩ নভেম্বরের শুনানিতে বিটিআরসি তাদের দাবির পরিমাণ কমিয়ে ৩৯৭ কোটি টাকায় নিয়ে আসে। কিন্তু ওই অংক নিয়েও সিটিসেল আপত্তি তোলে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় কিস্তিতে সিটিসেলকে কত টাকা দিতে হবে তা নির্ধারণ করে দেয় আদালত। বলা হয়, ১৯ নভেম্বরের মধ্যে সিটিসেল ১০০ কোটি টাকা না দিলে বিটিআরসি আবার তরঙ্গ বন্ধ করে দিতে পারবে।

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল), যা পরে মালিকানার হাতবদলে সিটিসেলে পরিণত হয়।

সর্বশেষ তথ‌্য অনুযায়ী, এ কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক বিএনপি নেতা মোরশেদ খানের প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেড।

এছাড়া সিঙ্গাপুরের সিংটেল এশিয়া প্যাসিফিক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এর ৪৫ শতাংশ এবং ফার ইস্ট টেলিকম লিমিটেড ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক।