নির্বাচনী আইন: সংস্কার প্রস্তাব থাকছে না বিদায়ী ইসির

বিদায়ের আর তিন মাস বাকি থাকায় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সদস‌্যরা শেষ মুহূর্তের কাজ গোছানায় ব‌্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু তাদের নিজেদের ‘অভিজ্ঞতার’ আলোকে আইনি সংস্কারের কাজটি থমকে আছে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2016, 08:18 AM
Updated : 5 Nov 2016, 08:24 AM

নির্বাচনী আইন সংস্কারে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে একগুচ্ছ মতামত পাওয়া গেলেও অল্প সময়ের মধ‌্যে নতুন কোনো কাজ আর হাতে নিতে চাচ্ছেন না কমিশনাররা। ফলে সংস্কারের ব‌্যাপারে সরকারের কাছে কোনো প্রস্তাবও থাকছে না তাদের।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে শেষ হচ্ছে পাঁচ সদস্যের ইসির মেয়াদকাল। পরে সার্চ কমিটির মাধ‌্যমে নতুন কমিশন গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

২০০৭ সালে বিদায়ের আগে ‘ইসি নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের আলাদা খসড়া’সহ নির্বাচনী আইন সংস্কারে বিভিন্ন সুপারিশ করেছিল এটিএম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন।

এবারও মাঠ পর্যায় থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় এক শতাংশ সমর্থন তালিকা, ‘না’ ভোটের বিধান, সমভোটে প্রার্থীদের লটারি প্রথা, ৫০ শতাংশ ভোট না পড়াসহ অন্তত দুই ডজন বিধির বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজনসহ সংস্কার প্রস্তাবনা পেয়েছে ইসি।

তবে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সংসদ নির্বাচনের জন্য ‘গণপ্রতিনিধি আদেশ’ এ সংশোধনী আনার বিষয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেই বলে একাধিক নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন।

এ কমিশনের মেয়াদে প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচন, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং বছরের শুরুতে ভোটার তালিকা হালনাগাদের মতো কাজ বাকি রয়েছে।

এছাড়া রাজনৈতিক দলসহ অন‌্য অংশীজনের সঙ্গেও সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কোনো আলোচনাই করেনি তারা।

সব মিলিয়ে বিদ‌্যমান পরিস্থিতিতে মাঠ কর্মকর্তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে একীভূত করার কাজটিও বেশ কষ্টসাধ‌্য মনে করেন ইসি কর্মকর্তারা। পাঁচ সদস‌্যের কমিশনে নানা বিষয়ে মতবিরোধের মধ‌্যে ‘সংস্কার’ প্রস্তাব বিষয়ে একমত হওয়া নিয়েও তাদের শঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনী আইনের সংস্কার নিয়ে নতুন কোনো প্রস্তাব শেষ সময়ে দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আর সময় রয়েছে মাত্র তিন মাস কয়েকদিন। এ সময়ে নতুন করে কোনো কাজ আর হয়ত হাতে নেওয়া সম্ভব হবে না।

“মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বেশকিছু প্রস্তাব এসেছে; আগামী ইসি চাইলে সেসব পর্যালোচনা করে দেখতে পারে।”

ইসি নিয়োগ পদ্ধতি নিয়েও মত নেই

নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আগের ইসি সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখলেও বর্তমান ইসি এ ধরনের সুপারিশের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ে সংবিধানের আলোকে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ‌্যমে ‘সিইসি ও ইসি নিয়োগ পদ্ধতির আইনের খসড়া’ পাঠায়। যদিও তা আর আমলে নেয়নি তৎকালীন সরকার।

পরবর্তীতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটি গঠন করেন, যার মাধ্যমে কাজী রকিব কমিশন গঠিত হয়।

সংবিধানের ১১৮(১) এ বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া এবং রাষ্ট্রপতি সময়ে সময়ে যে রূপ নির্দেশ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।’

গত চার দশকের বেশি সময়ে সংবিধান অনুসারে আইনটিই করা হয়নি।

এ অবস্থায় ‘নিয়োগ পদ্ধতি’ নিয়ে বর্তমান কমিশন সরকারের কাছে কোনো প্রস্তাবনা দেবে কিনা- এমন প্রশ্নে কাজী রকিব বলেন, “নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংবিধানে বলা আছে। আইন হলে হবে। যতদিন না আইন হয়, ততদিন সংবিধান অনুসারে হবে।”

তিনি জানান, (সিইসি ও ইসির নিয়োগ) এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, সে মোতাবেকই হবে।