বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বেগের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসের এক আলোচনায় মন্ত্রী পরিবেশবাদীদের কটাক্ষ করে বলেছিলেন, “সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ থেকে বাঘ ভারতের দিকে চলে যাচ্ছে বলে অনেকে হৈ চৈ করেন। আমি বলি, বাঘ ওপারে বেড়াতে গেছে, আবার চলে আসবে।”
বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ার সরকারি পরিসংখ্যান উড়িয়ে দিয়েও সেদিন তিনি বলেছিলেন, “আমার জানা মতে, পরিসংখ্যান হল সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। যারা এসব পরিসংখ্যান তৈরি করেন, তারা সত্যবাদী নন।”
বুধবার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক দুই দিনের এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক তার আগের বক্তব্য মনে করিয়ে দিলে মন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, “হ্যাঁ, ওই বাঘ ফিরে এসেছে। এমনকি ফিরে এসে তারা বাচ্চাও দিয়েছে।”
“আমি তাদেরকে বলি- আপনারা একচেটিয়া কথা না বলে বই-পুস্তক পড়েন, আরও জানেন। এই দেশটা তো আগে এক ছিল। বাঘের জন্য তো কোনো সীমান্ত নেই। কেন শুধু শুধু চিল্লাফাল্লা? বাঘ যাবে, আসবে-এই তো,” বলেন তিনি।
বাঘের আসা-যাওয়ার কথা বললেও কোনো পরিসংখ্যান দেননি মন্ত্রী।
ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বন বিভাগ ও ভারতের বন্য প্রাণী ইনস্টিটিউটের এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বর্তমানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে মাত্র ১০৬টি।
১৯৭৫ সালের জরিপে (বুবার্ট হ্যান্ড্রিস) সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে রেডিও টেলিমেট্রি জরিপে (বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) ৪০০টি থেকে ৪৫০টি বাঘ রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
সারাবিশ্বে বাঘ কমে যাওয়ায় তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২০১৪ সালে বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে অংশ নিয়ে এই প্রাণীটি বাঁচাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের জাতীয় পশুর আবাসস্থল সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে বাঘ নিয়ে ওই কথা বলেন পরিবেশন্ত্রী মঞ্জু।
ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে ১৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে।
কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে ঠেলে দেবে দাবি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পরিবেশবাদীরা তার বিরোধিতা করছে।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পরিবেশের ক্ষতি ন্যূনতম মাত্রায় রেখে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে তা সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে কি না- এক সাংবাদিকের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে মঞ্জু বলেন, “বান্দরবানে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সেখানকার মানুষের মাটির প্রয়োজন হলে সেখানে পাহাড় না কেটে উপায় কী? আমরা যারা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ, আমাদের গ্যাসও নাই, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎও নাই। তাহলে আমরা গাছ না কাটলে রান্না হবে কী করে?
“কিন্তু পরিবেশবাদীরা কথাগুলো ঢালাওভাবে বলতে থাকেন, একটু চিন্তাও করেন না। সবকিছু যেভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে বলে ওরা চিল্লায় সেভাবে আসলে হয় না।”
সাউথ এশিয়ান ওয়াইল্ড লাইফ এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের দুই দিনের বার্ষিক বৈঠক উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনূস আলী জানান, ভারত থেকে নেমে আসা হাতি সংরক্ষণে দুই দেশ যৌথভাবে কাজতে একটি চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে।