‘জাহিদ, কাদেরী, রোকনের টাকায় কয়েক কোটির জঙ্গি তহবিল’

গুলশান হামলায় জড়িত নব‌্য ‌জেএমবি তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিতে কয়েকজন শীর্ষ নেতার চাঁদায় কয়েক কোটি টাকার তহবিল গড়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2016, 11:20 AM
Updated : 18 Oct 2016, 04:55 PM

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন এ তথ‌্য।

তিনি জানান, সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর পাওয়া প্রায় কোটি টাকা জমা দিয়েছিলেন নব‌্য জেএমবির এই তহবিলে। সাবেক ব‌্যাংকার তানভীর কাদেরী তার উত্তরার ফ্ল্যাট বিক্রি করে পাওয়া কোটি টাকাও সংগঠনে দিয়েছিলেন।

এছাড়া পুরো পরিবার নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া খিঁলগাওয়ের চিকিৎসক খন্দকার রোকনুদ্দীন নব‌্য জেএমবির তহবিলে ৮০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান মনিরুল। 

তিনি বলেন, ওই তিনজনের বাইরে আর কারা জেএমবিকে তহবিল যুগিয়েছে, তা বের করতে কাজ করছেন গোয়েন্দারা।

এর আগে গত মাসে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মনিরুলই বলেছিলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় ব‌্যবহৃত অস্ত্র ও অর্থ- দুটোই বিদেশ থেকে এসেছে বলে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তথ‌্য ‌পেয়েছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছিলেন, “অর্থটা বাইরে থেকে এসেছে। কিন্তু সেটি বাংলাদেশের কেউ বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন, না কি বাংলাদেশ থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পাঠিয়েছে যাতে ধরা না পড়ে- সেটি এখনও তদন্ত সাপেক্ষ।”

মনিরুল সেদিন বলেছিলেন, একটি সূত্র থেকে হুন্ডির মাধ‌্যমে প্রায় ১৪ লাখ টাকা জেএমবির হাতে আসার কথা তারা জানতে পেরেছেন। কারা ওই অর্থ সংগ্রহ করেছে, সে তথ‌্যও পেয়েছেন। যেসব দেশ ‘হুন্ডির হাব’ হিসেবে পরিচিত, তেমনই এক দেশ থেকে এসেছিল ওই অর্থ।

মেজর জাহিদুল ইসলাম, তানভীর কাদেরী ও খন্দকার রোকনুদ্দীন

মেজর জাহিদ:
গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত হন জাহিদ। পুলিশের ভাষ‌্য অনুযায়ী, তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ অভিযানে নিহত নব‌্য জেএমবির শীর্ষ নেতা
প্রধান সহযোগী। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তাই গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।   

তানভীর কাদেরী: কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা বলছেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর জঙ্গি দলটির সমন্বয়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছিলেন তানভীর কাদেরী। ‘আব্দুল করিম’ ও ‘শমসেদ’ নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন তিনি। করিম নাম ব্যবহার করেই তিনি বসুন্ধরা আবাসিকে গুলশান হামলাকারীদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন। ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরে পুলিশের অভিযানের পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

খন্দকার রোকনুদ্দীন: ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনুদ্দীন (৫০) খিলগাঁও চৌধুরী পাড়ায় থাকতেন। তার স্ত্রী নাইমা আক্তার (৪৫) যশোর সরকারি এম এম কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তাদের সঙ্গে তাদের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন (২৩) ও রামিতা রোকন (১৫) এবং জামাতা সাদ কায়েস (৩০) গত এক বছর ধরে নিখোঁজ। পুলিশের ধারণা, তারা সিরিয়া হয়ে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাড়ি জমিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল মঙ্গলবার ব্রিফিংয়ের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক টাকা তহবিলে জমা হয়েছিল, সংগঠনের অনেকেই সেই টাকা তছরুপ করেছিল বলে তথ্য রয়েছে। গুলশান হামলায় বেশি টাকা খরচ হয়নি।”

এই পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নব্য জেএমবির সদস্য ও নেতারা নিজেদের কাছে খুব বেশি টাকা রাখতেন না। সংগঠনের বিশ্বস্ত লোকজনের কাছে টাকা জমা রাখতেন।

গত ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার এক বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় আব্দুর রহমান আয়নাল (৩০) নামে এক জেএমবি নেতা ‘পাঁচতলা থেকে পড়ে’ নিহত হন। ওই বাসা থেকে যে ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল, তাও নব্য জেএমবির তহবিলের টাকা বলে জানান মনিরুল।

তিনি বলেন, “নব্য জেএমবির তহবিলের টাকা অপারেশনের কাজে ব্যয় করার পাশপাশি নিবেদিতপ্রাণ সদস‌্যদের বেতন, খাওয়া ও তাদের সন্তানদের পড়ালেখার জন‌্য ব্যয় করা হতো। নেতা-কর্মীদের বেতন-ভাতা ঠিক করা হত সংগঠনে তাদের অবস্থান অনুযায়ী।”

মনিরুল বলেন, যেসব জায়গায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে নব্য জেএমবির সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের সবার কাছেই ‘পর্যাপ্ত টাকা’ ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ‘অনেকটা পলাতক জীবনযাপন’ করায়, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে থাকায় তারা ছিল মানসিকভাবে অনেকটাই দুর্বল।

শারীরিকভাবেও এই জঙ্গি সদস‌্যদের অনেককে ‘দুর্বল মনে হয়েছে’ বলে মন্তব‌্য করেন তিনি।