জঙ্গি তানভীরের স্ত্রী দুষছেন স্বামীকে

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অনুতাপ প্রকাশ করে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার জন‌্য স্বামীকে দায়ী করেছেন নিহত জঙ্গিনেতা তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2016, 12:13 PM
Updated : 9 Oct 2016, 02:02 PM

এক মাস আগে ঢাকার আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার ফাতেমাসহ তিন নারীকে রোববার ঢাকার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন‌্য হেফাজতে চায় পুলিশ।

পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানির সময় মহানগর হাকিম মো. নূর নবী আসামিদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের তো আইনজীবী নেই, আপনারা কিছু জানাতে চান?”

তখন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো তানভীর কাদেরীর স্ত্রী ফাতেমা বলেন, “আমাদের ভুল হয়ে গেছে। স্বামীর কারণে এই কাজ করেছি। হুজুর, আমাদের মাফ করে দেন।”

পুলিশ বলছে, ‘নব্য জেএমবি’র নেতা তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জের অভিযানে নিহত হওয়ার পর জঙ্গি সংগঠনটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন কাদেরী।

গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে পুলিশি অভিযানের সময় টিকতে না পেরে তানভীর আত্মহত‌্যা করেন বলে পুলিশের ভাষ‌্য।

তখন ফাতেমার সঙ্গে গুলশান হামলায় জড়িত নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি এবং জেএমবি নেতা বাসারুজ্জামান চকলেটের স্ত্রী শারমিন ওরফে শায়লা আফরিনকে পুলিশ আহত অবস্থায় আটক করে।

এই বাড়ি থেকে আটক হন ফাতেমা

ওই বাড়িতে অভিযানের সময়ের ছবি

ওই তিন নারী মরিচের গুঁড়া ও ছোরা নিয়ে হামলা চালিয়েছিলেন বলে সেদিন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। তিনজনের মধ‌্যে একজন পুলিশের গুলিতে আহত হন, বাকি দুজন ছুরি দিয়ে আত্মহত‌্যার চেষ্টা করেন বলে জানায় পুলিশ।

এরপর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) এসআই দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করেন।

মামলায় এই তিন নারীর সঙ্গে তানভীর কাদেরী এবং তার কিশোরপুত্রকেও আসামি করা হয়। ওই কিশোরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর রোববার তার মাসহ তিন নারীকে আদালতে নেয় পুলিশ।

আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন আসামিই অনুতাপ প্রকাশ করেছেন।

শুনানিতে উপস্থিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির আহমেদ সজিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বামীর কারণেই এ ধরনের পথে পা বাড়িয়েছেন বলে স্বীকার করেন ফাতেমা।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল তাওয়াতের মেয়ে ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন’এ চাকরি করতেন।

গাইবান্ধার বাটিকামারি গ্রামে তানভীর কাদেরীর ঘর

২০০১ সালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাটিকামারি গ্রামের তানভীরের সঙ্গে বিয়ে হয় ফাতেমার। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে দুটি বেসরকারি কোম্পানি ঘুরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখায় উচ্চ পদে যোগ দিয়েছিলেন তানভীর।

২০১৪ সালে হজ করতে সপরিবারে সৌদি আরবে যান তানভীর। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তানভীরের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতা ধরা পড়ে আত্মীয়দের চোখে। ফাতেমাও তখন থেকেই হিজাব পরা শুরু করেন বলে স্বজনরা জানান।

হজ থেকে ফিরে ২০১৪ সালে ডাচ-বাংলার চাকরি ছেড়ে ‘আল সাকিনা হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন তানভীর।

তানভীর-ফাতেমা দম্পতির জমজ ছেলের একজন ধরা পড়লেও অন‌্য জনের খবর পুলিশ জানাতে পারেনি। গ্রেপ্তার ছেলেটি নিজের ও তার বাবা-মায়ের জঙ্গি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে পুলিশের ভাষ‌্য।

ফাতেমাসহ তিন নারীকে ১০ দিনের জন‌্য হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক সাত দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।