ভূমিকম্পে কী করতে হবে, মহড়া হল সচিবালয়ে

ঘড়ির কাটা ১১টা ছুঁতেই বিকট শব্দে বেজে উঠল সাইরেন। চারটি ভবনে জ্বলল আগুন। উদ্ধার যন্ত্রপাতি নিয়ে প্যাঁ-পোঁ শব্দে ছুটে এল ফায়ার সার্ভিস। আধঘণ্টা ধরে চলল ‘উদ্ধার অভিযান’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2016, 09:32 AM
Updated : 9 Oct 2016, 09:32 AM

ঢাকা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে ধরে নিয়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে রোববার ভূমিকম্প পরবর্তী এই উদ্ধার অভিযানের মহড়া দেখালেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা। 

সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে ভবনের নিচতলায় অবস্থানকারীরা মাথার উপর ব্যাগ, হাত বা শক্ত কিছু রেখে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসেন। বন্ধ করে দেওয়া হয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ। লিফটগুলো রাখা হয় ল্যান্ডিং পজিশনে।

ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার মহড়া: সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে ধোঁয়া।

ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার মহড়ায় আহত একজনকে আনা হয়েছে চিকিৎসা দিতে।

দ্বিতীয় তলা থেকে উপরের তলাগুলোতে অবস্থানকারীরা এ সময় কলাম ও বিমের সংযোগ স্থল ঘেঁষে, শক্ত ও মজবুত টেবিলের নিচে বা ফার্নিচারের পাশে অবস্থান নেন। দ্রুত নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিতে গিয়ে আহত হয়েছেন ধরে নিয়ে কয়েকজনকে ‘উদ্ধার’ করে দেওয়া হয় ‘চিকিৎসা’।

মহড়ায় ভূমিকম্পে ‘আতঙ্কিত হয়ে’ অনেকে অবস্থান নেন ভবনের ছাদে। সচিবালয়ের ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ভবনের ছাদ এবং কয়েকটি কক্ষ থেকে এ রকম ‘আটকে পড়াদের’ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

সচিবালয়ের ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার মহড়া দেখছেন দুর্যোগ ব‌্যবস্থাপনামন্ত্রী, সচিবসহ অন্যরা।

সচিবালয়ের ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার মহড়ায় ক্রেইন দিয়ে চলছে উদ্ধার অভিযান।

একটি ভবন থেকে কয়েকজনকে রশি বেয়ে নিচে নামতে দেখা যায়। চারতলা থেকে একজনকে নিচে নামানো হয় স্ট্রেচারে বেঁধে ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’। ৭ নম্বর ভবন থেকে ‘গুরুতর আহত’ ধরে নিয়ে এক নারীর ডামি রশি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।

সচিবালয়ে কর্মরত কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী মহড়ার সময় ভবন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন। অনেকে ছাদে উঠে বা কক্ষের জানালা দিয়ে মহড়া দেখেন।

ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর যৌথভাবে এই মহড়ার আয়োজন করে। মহড়ার নেতৃত্ব দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেইনেন্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ।

ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার মহড়া: আটকে পড়াদের উদ্ধারে ক্রেইন পৌঁছে গেছে ভবনের ছাদে।

ভূমিকম্পের পর যদি আগুন লাগে? সচিবালয়ে মহড়ায় ছিটানো হচ্ছে পানি।

ফায়ার সার্ভিসের ১২০ জন কর্মী; ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি শাখার ১০ জন, মেডিকেলের ১০ জন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের দুইজন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ১৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ মহড়ায় অংশ নেন।

উদ্ধার অভিযানেই শেষ নয়; মহড়ার অংশ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল। তিনি বলেন, “৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন, আহত হয়েছেন ১২০ জন।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান মহড়া শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার মহড়ায় সচিবালয়ে এক নারীর ডামি নেওয়া হচ্ছে চিকিৎসাকেন্দ্রে।

না, আগুন লাগেনি; সচিবালয়ে চলছে ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার মহড়া।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অস্থায়ী ক্যাম্পে বসে এই মহড়া দেখেন।

মহড়া শেষে মন্ত্রী বলেন, আগামী ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালনের অংশ হিসেবে এই মহড়া হল। ১০ অক্টোবর সদরঘাটেও এ ধরনের মহড়া হবে।

“ভূমিকম্প ও বজ্রপাতের আগাম সতর্কতা দেওয়া যায় না। ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতন করতেই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে,” বলেন মায়া।