যৌবনে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সৈয়দ হক: আনিসুজ্জামান

সমসাময়িক ও অগ্রজদের আশঙ্কা-বিদ্রুপকে উপেক্ষা করে প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হক যৌবনে পেশা বেছে নিয়েছিলেন লেখালেখিকে। বাংলা একাডেমি সভাপতি ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চোখে সেই সিদ্ধান্তটি ছিল ‘ভীষণ সাহসী’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2016, 06:31 PM
Updated : 7 Oct 2016, 06:31 PM

শুক্রবার বিকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির আয়োজনে সৈয়দ হকের স্মরণানুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “সৈয়দ হক যৌবনে এক অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে পেশা হিসেবে লেখালেখিকেই বেছে নিয়েছিলেন। আমরা আশঙ্কা জানিয়েছিলাম, এটা কি সম্ভব হবে সেময়ের প্রেক্ষাপটে। কিন্তু তিনি সেটাকে সম্ভব করে ছেড়েছেন।

“সৈয়দ শামসুল হক তার রচনায় এদেশের মানুষের ব্যক্তিগত, যৌথ ও আনন্দ-বিষাদ, সমস্যা-সঙ্কটের কথা যেমন বলেছেন, তেমনিভাবে ভবিষ্যতের স্বপ্নও দেখিয়েছেন।”

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ব্যক্তি সময়ের যে নির্মমতা তাকে সৈয়দ হক জয় করেছিলেন। তার কাছে জীবন অনেক বড় সত্য ছিল।”

সৈয়দ হকের রচনার বহুমাত্রিকতা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠে অগ্রজ এই শিক্ষাবিদ বলেন, “তিনি মনে করতেন, সাহিত্য চর্চা মানে অশিক্ষিতের পটুত্ব নয়। সাহিত্যচর্চা মানে জ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে নতুন সাহিত্য সৃষ্টি। কবিতা, গদ্য, কাব্যনাটক- সব শাখায় ভাষা, নির্মাণশৈলীতে নতুনত্ব এনেছেন। জীবন থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে তা সাহিত্যে প্রয়োগ করেছেন।”

দাম্পত্যের ৫০ বছর এক ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’র সঙ্গে কাটিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন লেখকপত্নী কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আনোয়ারা সৈয়দ হক।

“এই জীবন যেন স্বপ্নের ভেতরে কেটেছে। কখনও মনে হয়নি, বাস্তবে পা ফেলে আমাদের দিন কাটছে। জীবনের শেষ সময়টুকুতেও মাথার ভেতরে তার কবিতা ঘুরপাক খেত।”

চিত্রনায়িকা কবরী বলেন, “আমার আজকের এ অবস্থানে আসার পেছনে যেসব গুণীজন ছিলেন তার মধ্যে সৈয়দ হক অন্যতম। বয়সে ছোট হওয়ায় তার খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। যতটুকু তার সান্নিধ্য পেয়েছি তাকে অনুধাবনের চেষ্টা করেছি।”

পরে তিনি সৈয়দ শামসুল হকের লেখা পাঠ করেন।

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, “পঞ্চাশের দশকে যে কজন লেখক বাংলা সাহিত্যে নতুন অবয়ব দেন তার মধ্যে অন্যতম একজন সৈয়দ শামসুল হক।”

গীতিকার রফিকুজ্জামান বলেন, “সৈয়দ শামসুল হক মূলত কবি। তার নাটকগুলোও যেন একেকটি কবিতা। সব্যসাচী শব্দটি ব্যবহার করে যেন তার কবি পরিচয়টাকে আড়াল করে ফেলা হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “তার (সৈয়দ হকের) লেখায় উঠে এলো সমষ্টির কথা আর মানুষের কথা। উঠে এল চর্যাপদের অক্ষর থেকে বাংলা সাহিত্যের উঠে আসার কথা । তিনি লেখার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে আনতে শুরু করেছিলেন।”

কবি মাহবুবুল হক শাকিল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৈয়দ শামসুল হকের হাসপাতালে কথোপকথনের কিছু অংশ বর্ণনা করেন।

“সেসময় সৈয়দ শামসুল হক প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আপনিই বাংলাদেশ। আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে মানুষের জন্য, বাংলাদেশের জন্য।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ হককে বলেছিলেন, ‘আপনাকেও বেঁচে থাকতে হবে’।

“তখন সৈয়দ হক প্রতুত্তরে জানিয়েছিলেন, ‘আমার ইচ্ছা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন করে যেতে চাই’। প্রধানমন্ত্রী তখনই বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষের যে জাতীয় কমিটি হবে তার আহ্বায়ক সৈয়দ শামসুল হক হবেন বলে জানান।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখকপুত্র দ্বিতীয় সৈয়দ হক।

অনুষ্ঠানে কবি পিয়াস মজিদ সৈয়দ শামসুল হককে নিবেদনে করে শঙ্খ ঘোষের লেখা ‘কথা হবে’ কবিতাটি পাঠ করেন।

স্মরণসভা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ‘পরানের গহিন ভিতরে সৈয়দ শামসুল হক’ শিরোনামে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে।