স্মার্টকার্ডের তথ্য বিতরণে ‘আনস্মার্ট’ ইসি

স্মার্টকার্ড বিতরণের তথ্য জানার চেষ্টা করতে গিয়ে নানা ভোগান্তির অভিযোগ মিলছে মানুষের কাছ থেকে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2016, 05:03 PM
Updated : 4 Oct 2016, 05:49 PM

নির্দিষ্ট নম্বরে ‘এসএমএস’ করলে পাওয়া যাচ্ছে ভুল তথ্য। সেই সঙ্গে কল সেন্টারের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্পর্কিত কোনো তথ্যও নেই ‘হেল্পলাইন ১০৫’ এ।

সোমবার ঢাকার রমনা ও উত্তরা থানা নির্বাচনী এলাকার দু’টি ওয়ার্ডে প্রথম পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনই কারিগরি ত্রুটি, প্রচারের অভাব ও অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তির শিকার হতে হয় নাগরিকদের।

দুইটি এলাকায় সোমবার মাত্র ২৫ শতাংশ নাগরিকদের হাতেই স্মার্ট কার্ড দিতে পেরেছে সংস্থাটি।

উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ বিতরণ কেন্দ্রে অনেকেই গণমাধ্যমে ‘হেল্পলাইনে’র ভুল প্রচারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সমস্যার কথা স্বীকার করে উত্তরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্মার্টকার্ড বিতরণের দ্বিতীয় দিনে জটিলতা কিছুটা কমেছে। তবে নির্ধারিত এলাকার নাগরিকদের (মঙ্গলবার ১০ নম্বর সেক্টর) বাইরে অন্য এলাকার ভোটার আসায় ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

“হেল্পলাইনের সেবা না পাওয়ার বিষয়ে আমাদের করার কিছু থাকে না। যারা সরাসরি আসছে তাদের সুবিধাজনক জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছি।”

তোপখানা রোড এলাকার ভোটার হুসাইন আহমদ জানান, বিতরণের তালিকায় অনুযায়ী সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে তার কার্ড দেওয়ার কথা ১৪ অক্টোবর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনআইডি উইং থেকে দেওয়া ১০৫ নম্বরে এসএমএস করলে বলা হচ্ছে ‘আপনার কার্ড বিতরণের সময় নির্ধারণ করা হয়নি’। একই উত্তর পাওয়া যাচ্ছে ওয়েবসাইটে এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে লগইন করেও।”

“স্মার্ট কার্ড নিয়ে ইসির আনস্মার্ট কাজের নমুনা এটা,” বলেন হুসাইন।

পরে কলসেন্টারে ফোন করার পর হেল্পলাইন থেকে তাকে ‘কারিগরি ত্রুটির’ কথা জানানো হয়।

ইসির এনআইডি উইংয়ের কমিউনিকেশন্স কনসালটেন্ট হোসাইন মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, এখন যেসব ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণ চলছে শুধু তার তথ্যই রয়েছে তাদের কাছে।

তিনি বলেন, “আমরা ঢাকায় কাজ শুরুর পরই নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। তবে হেল্পলাইন থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ সংক্রান্ত তথ্য না পাওয়া ও এসএমএসের নমুনা সঠিকভাবে না হওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনছি দ্রুত।”

সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা শিগগির নেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, “এসএমএস তথ্য পাওয়ার বিজ্ঞাপনে একটা ভুল হয়েছিল। এনআইডি লিখেই ১৭ ডিজিট দিতে হবে। এ বিষয়ে আইডিইএ প্রকল্প থেকে সংশোধিত বিজ্ঞাপন প্রচারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে।”

অবশ্য এনআইডি উইংয়ের ওয়েবসাইটে http://nidw.gov.bd/images//sampledata/smart_card/FinalPaperAds.jpg এসএমএসের নমুনা সঠিক দেখানো হয়েছে।

আগামী ২২ অক্টোবর উত্তরা এক নম্বর ওয়ার্ড ও ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত রমনার ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে স্মার্ট কার্ড বিতরণ চলবে।

আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের নয় কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেওয়ার কথা রয়েছে।

দ্বিতীয় দিনেও ২৪%

উৎসাহী মানুষের ভিড় দেখা গেলেও দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর উত্তরা ও রমনায় মাত্র ২৪ শতাংশ নাগরিক স্মার্ট কার্ড নিয়েছেন। কারিগরি ত্রুটি ও ব্যবস্থাপনা অভাবসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা গেছে।

উত্তরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহজালাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার নির্ধারিত ভোটার এলাকার ২ হাজার ৮০০ জন জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিকদের মধ্যে ৫৮৭ জন স্মার্টকার্ড নিয়েছে।

রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মহবুবা মমতা হেনা সাংবাদিকদের জানান, নির্ধারিত ভোটার এলাকার ৪ হাজার ২০৩ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৮৩ জন স্মার্ট কার্ড নিয়েছে।

ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে এমন ভাসমান ভোটার বেশি ও অফিস খোলার দিন থাকায় নাগরিকদের উপস্থিতি কম হয়েছে বলে মনে করেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

আগামী শুক্রবার-শনিবারের দিকে নাগরিক উপস্থিতি বেশি থাকবে বলে আশা করছেন তারা।

উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ডে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এবং রমনার ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত বিতরণ চলবে স্মার্টকার্ড।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায়ও ৩ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর এক লাখ ২১ হাজার ভোটারের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ হচ্ছে।

রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, “আজ থেকে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। অনেক লোক পুরনো কার্ড না এনেই সেন্টারে উপস্থিত হচ্ছে, অনেকে বিতরণের সূচি জানে না। সব মিলিয়ে দু’দিনে কম বিতরণ হয়েছে। আশা করি, বুধবার থেকে ভালোভাবে কাজ চলবে।”