দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শুল্ক কর্মকর্তা

দুর্নীতি ও সরকারি চাকরি বিধি ভাঙার অভিযোগে এক কাস্টমস কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2016, 06:49 PM
Updated : 27 Sept 2016, 05:47 PM

এম হাফিজুর রহমান নামে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তা কাস্টমস কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে কাস্টমস কমিশনার হাফিজুরকে বরখাস্ত করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপ-সচিব হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক আদেশ জারি করা হয়েছে।

ছুটি নিয়ে যথাসময়ে কর্মস্থলে যোগদান না করা, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করা সরকারি এই কর্মকর্তাকে বরখাস্তের পেছনে অন্যতম কারণ বলে আদেশে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, কমিশনার অব কাস্টমস (চলতি দায়িত্ব) এম হাফিজুর রহমান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে যুক্তরাজ্যে কোভেন্টারি ইউনিভার্সিতে মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কোর্সে অধ্যয়নের জন্য ছুটি নেন।

হাফিজুর রহমানের ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা ছুটি ও ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে একই বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত বহিঃ বাংলাদেশ ছুটি (অর্জিত ছুটি) মঞ্জুর করা হয়।

শিক্ষা ছুটির শর্তানুযায়ী কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশনা সত্ত্বেও তিনি ছুটি শেষে নির্দিষ্ট সময়ে দেশে না এসে কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে বিধি বহির্ভূতভাবে বিদেশে অবস্থান করেন বলে জানানো হয়।

এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল), বিধিমালা ১৯৮৫ এর বিধি-৪(৩)(ডি) বিধি অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়।

আদেশে আরও বলা হয়, হাফিজুর রহমান দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘বেস্ট লজিস্টিক লিমিটেড’ নামে একটি ফ্রেইট ফরোয়ার্র্ডিং প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ মালিকানা অর্জন করেন।

“অবৈধ অর্থে একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয়, দুবাই ও লন্ডনে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থে এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে তদন্তে প্রমাণিত হয়।”

অসদাচরণ, ডিজারশান ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। কিন্তু ওই নোটিশের জবাব দেননি তিনি।

হাফিজুর রহমান নোটিশের জবাব না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে হাফিজুর রহমান জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থে এফডিআর ক্রয় ছাড়াও ২০১০-২০১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-২০১৫ পর্যন্ত পাঁচটি অর্থবছরের মোট ১৯টি যৌথ হিসাবে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

তবে এবিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে কোনো মতামত দেয়নি।

দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটি বিধি ৭(৬) অনুযায়ী কেন তাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না জানতে চেয়ে তার কাছে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর লিখিত জবাব চায়।

২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে হাফিজুর রহমান বেস্ট লজিস্টিক লিমিটেডের মালিকানা অর্জন, মা, স্ত্রী এবং বন্ধুর নামে আলাদা আলাদা এফডিআর রয়েছে বলে স্বীকার করেন।

আদেশে বলা হয়, “এতে তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়।”

হাফিজুর রহমানকে বরখাস্তে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের মতামত চাওয়া হলে ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই একমত পোষণ করা হয়। এরপর চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি বরখাস্তের আদেশ অনুমোদন করেন।

পরে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৪ (৩) অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ তারিখ হতে হাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়।