হলি আর্টিজান হামলার জঙ্গিদের দাফন হল জুরাইনে

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ৮৩ দিন পর পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ‌্যমে দাফন করা হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে।

লিটন হায়দারও গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2016, 12:28 PM
Updated : 22 Sept 2016, 02:23 PM

ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাবিদারহীন হিসেবে ছয়টি লাশ আঞ্জুমানকে দেওয়া হয়েছে। ওই লাশগুলোর দাবি নিয়ে স্বজনদের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।”

দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে লাশ বুঝে পাওয়ার পর বিকালের মধ‌্যেই জুরাইন কবরস্থানে ছয়জনকে দাফন করা হয় বলে আঞ্জুমানের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।    

গত ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের ওই ক্যাফেতে নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

প্রায় ১২ ঘণ্টা পর সশস্ত্র বাহিনী অভিযান চালিয়ে ওই ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সে সময় নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে জেএমবি সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ।

মোবাইলে সাইফুল চৌকিদারের ছবি হাতে তা মা

হামলাকারী পাঁচ তরুণ- নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল

ওই ছয়জনের মধ্যে শরীয়তপুরের সাইফুল চৌকিদার নামে একজন ছিলেন ওই বেকারির পাচক। তিনিও ‘হামলাকারীদের সঙ্গে থেকে তাদের সহায়তা করেন’ বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

নিহত পাঁচ জঙ্গির মধ‌্যে নিবরাজ ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। আর রোহান ইবনে ইমতিয়াজ পড়তেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। মীর সামিহ মোবাশ্বের স্কলাস্টিকার ছাত্র।

এছাড়া বগুড়ার ধুনট উপজেলার কৈয়াগাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং শাহজাহানপুর উপজেলার খায়েরুজ্জামান মাদ্রাসা ছাত্র ছিলেন।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রাখা তাদের মরদেহ থেকে দুই দফা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ওই জঙ্গিরা হামলার আগে কোনো ধরনের মাদক নিয়েছিলেন কি না জানতে যুক্তরাষ্ট্রেও পাঠানো হয় সেই নমুনা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান গত ২৩ অগাস্ট জানান, নিহত ছয়জনের ডিএনএর সঙ্গে স্বজনদের ডিএনএ মিলিয়ে তারা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে পরিবারের কেউ লাশ চেয়ে লিখিত আবেদন করেননি।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক রাশিদুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আঞ্জুমানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সিএমএইচের হিমঘর থেকে কফিনগুলো পুলিশের কাছে দেওয়া হয়।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরও সেসময় উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

হলি আর্টিজানের জঙ্গিদের দাফনের বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্জুমানের নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস আহমেদ বিষয়টি এড়িয়ে যান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় লোকজনের লাশ আমাদের দেয়, আমরা দাফন করি। আজও দিয়েছে। তারা হলি আর্টিজানের কি না- তা আমাদের জানা নেই।”

তবে আঞ্জুমান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ছয়জন ক‌্যারিয়ার ও দুটি পিকআপ নিয়ে কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন। সিএমএইচ থেকে লাশ পাওয়ার পর বিকালের মধ‌্যেই জুরাইনে দাফন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “লাশের শরীরের চিহ্ন দেখে আমরা তার ধর্ম বোঝার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রেও ধর্মীয় নিয়ম মেনে লাশ দাফন করা হয়েছে।” 

নিহত তরুণদের মধ‌্যে একজনের বাবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পুলিশ তাদের খবর না দিলেও ‘আঞ্জুমানের একজনের কাছ থেকে’ তিনি জুরাইনে ছয়জনকে দাফনের বিষয়টি জানতে পেরেছেন।