‘স্পর্শকাতর’ আদেশে ‘জঙ্গির’ শিশুপুত্র রিমান্ডে

ঢাকার আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরী সিপারের অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত, যাকে ‘স্পর্শকাতর’ আদেশ বলেছেন এক আইনজীবী।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাসও কামাল তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2016, 02:46 PM
Updated : 18 Sept 2016, 03:25 PM

গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে বিজিবি সদর দপ্তরের ২ নম্বর ফটকের কাছে একটি বাড়িতে অভিযানে তানভীর কাদেরি নিহত হওয়ার পর তার ছেলেসহ তিনটি শিশুকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

গুলশান হামলার প্রেক্ষাপটে পুলিশের অভিযানে নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর কাদেরীই ‘নব্য জেএমবি’র সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

ওই ঘটনায় পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ একটি মামলা করে। ওই মামলায় কাদেরীর ১৪ বছরের ছেলেকেও (শিশু বলে নাম প্রকাশ করা হল না) আসামি করা হয়।

বাবার বিষয়ে তথ‌্য জানতে ওই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে চেয়ে রোববার ঢাকার শিশু আদালতে নিয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ কমিশনার আহসানুল করিম।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এই কর্মকর্তা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের জ‌্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন বলেন, “পুলিশ ওই বাড়িতে ঢোকার জন্য দরজা খোলার পর এই আসামি ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।”

ঢাকার একমাত্র শিশু আদালতের বিচারক অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিনের আদালতে তখন সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় অভিজ্ঞ আইনজীবী ফারুক আহমেদও ছিলেন।

তার কাছে জজ রুহুল আমিন মত জানতে চাইলে তিনি বিচারককে বলেন, “এমনিতে আইনে শিশুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, তবে রাষ্ট্র ও জনস্বার্থে এ বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।”

ঢাকার জজ আদালত

এরপর বিচারক তিন দিন হেফাজতে রেখে শিশুটিকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। সেইসঙ্গে তিনি হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেন।

শুনানিতে শিশুটির পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ নেননি।

ফৌজদারি আইনে অভিজ্ঞ আইনজীবী ও ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি মো. বোরহানউদ্দিন শিশুকে রিমান্ডে পাঠিয়ে আদালতের এই আদেশকে ‘স্পর্শকাতর’ বলে মন্তব‌্য করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই আদেশটি স্পর্শকাতর কারণ শিশু আইনে পুলিশ রিমান্ডের সুযোগ সীমিত। শিশু যেন ভয় না পায়, সেজন্য আইনে মামলার শুনানির সময় এজলাসে বিচারককেও কোর্ট গাউন না পরে সিভিল ড্রেসে শুনানি নিতে বলা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “শিশুকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে আনা-নেওয়া করা যাবে না। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের সময় অবশ্যই সরকারের সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের প্রবেশন অফিসারের উপস্থিতি থাকতে হবে।”

এই বাড়িতে অভিযানে নিহত হন কাদেরী

শিশুটির রিমান্ডের বিষয়ে সাবেক হাকিম রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিশ্চয়ই শিশুটির পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়ায়নি।

“তার পক্ষে কোনো আইনজীবীর দাঁড়িয়ে বলা উচিৎ ছিল যে শিশুটিকে স্বাভাবিক আসামিদের মতো হেফাজতে নেওয়া যাবে না।”

শিশুটিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকল আইন মেনেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

পুলিশের অভিযানে তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আহত অবস্থায় আটকের পর হাসপাতালে এখন তিনি।

গাইবান্ধার কাদেরী একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চ পদের কর্মকর্তা ছিলেন; তার স্ত্রী ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে কাজ করছিলেন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়।

দুই বছর আগে সৌদি আরব থেকে ফিরে তারা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন বলে পুলিশের ভাষ‌্য। তাদের আরেকটি ছেলেও রয়েছে।