মগবাজার ফ্লাইওভারের দ্বিতীয় দুয়ার খুলল

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বহু আলোচিত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দ্বিতীয় অংশ উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2016, 06:17 AM
Updated : 15 Sept 2016, 06:17 AM

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার ইস্কাটন থেকে ওয়‌্যারলেস (মৌচার ক্রসিং) পর্যন্ত ফ্লাইওভারের এক কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করেন।

এর আগে গত মার্চে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর দেশের দীর্ঘতম এই ফ্লাইওভারের রমনা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।

ইস্কাটন- ওয়‌্যারলেস অংশের উদ্বোধন করে মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, “মাননীয় প্রধামন্ত্রী অলরেডি এই ফ্লাইওভার উদ্বোধন করে দিয়েছেন। আমরা এর সাইডগুলো উদ্বোধন করছি। আমি যে অংশটার উদ্বোধন করলাম সেটার দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। অন্য অংশগুলো আগামী বছর জুন জুলাই এর মধ্যে উদ্বোধন করতে সক্ষম হব ইনশাল্লাহ।”

তিন দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার পাশাপাশি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকায়। নির্মাণ কাজের মধ্যেই নকশায় ত্রুটির নিয়ে তৈরি হয় উদ্বেগ, সমালোচনা।

তারপরও নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় বিশাল নির্মাণ কাজের ভোগান্তি আর যানজটের ধকল থেকে রেহাই পেতে নাগরিকরা অধীর আগ্রহ নিয়ে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রীও আশা করছেন, ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হলে তা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখাবে।

“একটা জিনিস ভুললে চলবে না, সব রাস্তা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। একটা জায়গায় ফ্লাইওভারের কাজ করলেই যানজট নিরসন হবে তা কিন্তু না। বরং একটা ফ্লাইওভার বিভিন্ন জায়গায় যানজটও সৃষ্টি করতে পারে। এর নিরসন হবে মাস্টার প্ল্যানে যা আছে তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের পর।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু করা এই ফ্লাইওভার দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

তবে ঠিকাদার ও তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার কারণে তিন দফায় সময় বাড়ানোর পর এখন ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। মেয়াদ বাড়ার সমান্তরালে প্রকল্পের ব্যয়ও প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়িয়ে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে সরকার।

অবশ‌্য মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দাবি, তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘অত্যন্ত সাশ্রয়ীভাবে’ এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ এগোচ্ছে।

“আমরা এই ফ্লাইওভারের কাজ এলজিইডির মাধ্যমে করাচ্ছি এবং অত্যন্ত সাশ্রয়ীভাবে করছি। অন্য সবাই পার মিটারে যা খরচ করে, আমরা তার চেয়ে কমে করাতে সক্ষম হয়েছি।”

সব মিলিয়ে ৮ দশমিক ৭ কিলোমিটার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ওঠা-নামার জন্য তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, সোনারগাঁও হোটেল, মগবাজার, রমনা (হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তা), বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও শান্তিনগর মোড়ে লুপ বা র‌্যাম্প রাখা হয়েছে।

ফ্লাইওভারের প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী জানান, তিনটি প্যাকেজে এই নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ‌্যে প্যাকেজ ৪ এর অধীনে সাতরাস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত অংশ আগেই উদ্বোধন হয়েছে। ওই প্যাকেজের আওতায় এফডিসি থেকে হোটের সোনারগাঁ ৪৫০ মিটার অংশের কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার যে অংশের উদ্বোধন হল, তার কাজ চলেছে প্যাকেজ ৬ এর আওতায়। ইস্কাটন থেকে মৌচাক হয়ে প্যাকেজ ৫ এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে এ অংশটি। শান্তিনগর থেকে মালিবাগ, রাজারবাগ, মৌচাক হয়ে রামপুরা পর্যন্ত অংশটি প্যাকেজ ৫ এর অন্তর্ভুক্ত।

ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ‘সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি’ এবং চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি (এমসিসিসি) ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ করছে।

অন‌্যদের মধ‌্যে এলজিআরডি সচিব আব্দুল মালেক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।