যারা ফাঁসি দিচ্ছে তারা জয়ী হবে না: কাসেমপত্নী

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতির মধ্যে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করে তার স্ত্রী বলেছেন, তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য ‘দায়ীরা’ জয়ী হবে না।

কামাল তালুকদার কাশিমপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2016, 02:16 PM
Updated : 3 Sept 2016, 04:01 PM

একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী আল-বদর বাহিনীর চট্টগ্রামের কমান্ডার মীর কাসেমের সঙ্গে ‘শেষবার’ দেখা করতে বিকালে কাশিমপুর কারাগারে স্বজনদের ঢুকতে দেয় কর্তৃপক্ষ।

প্রায় তিন ঘণ্টা সাক্ষাতের পর কারাগারের বাইরে এসে কাসেমপত্নী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, “যারা ফাঁসি দিচ্ছে তারা জয়ী হবে না।এই মৃত্যু ইসলামের জন্য মৃত্যু। এই মৃত্যু শহীদের শামিল।”

পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে একাত্তরে যখন মুক্তিকামী বাঙালি সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলে, সে সময় ইসলামের দোহাই দিয়ে বাঙালির বিপক্ষে দাঁড়ায় জামায়াতে ইসলামী।

দলটির সে সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শহর কমিটির সভাপতি কাসেম সেখানে আল-বদর বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। নগরীর পুরাতন টেলিগ্রাফ রোডে তিনতলা ‘মহামায়া ভবন’ দখলে নিয়ে ‘ডালিম হোটেল’ নাম দিয়ে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলেন তিনি।

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছেন মীর কাসেম।

ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমানের নিখোঁজ থাকার কথা উল্লেখ করে আয়েশা বলেন, “তাকে ফিরে না পাওয়ায় কষ্টে আছি। আশা করছি, সে ফিরে আসবে।”

মীর আহমেদ বিন কাসেমকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে গত ১০ অগাস্ট পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও পুলিশ বলছে, বিষয়টি তাদের অজানা।

মীর কাসেমের স্ত্রীর সঙ্গে তার দুই মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া ও তাহেরা তাসনীম, দুই পুত্রবধূ সাহেদা তাহমিদা ও তাহমিনা আক্তারসহ ৩৮ জনকে বিকালে কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়।

সব বিচারিক প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হওয়ায় কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রানভিক্ষা চাওয়াই ছিল জামায়াতের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমের প্রাণ বাঁচানোর শেষ সুযোগ।

তিনি সেই সুযোগ নেবেন না বলে শুক্রবার জানিয়ে দিলে কারা কর্তৃপক্ষ তার পরিবারকে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় সাক্ষাতের সময় দেয়।

এর আগে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পরিবারের শেষ সাক্ষাতের দিনই তাদের ফাঁসি কার্যকর করেছে কতৃপক্ষ।

এদিকে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করতে সরকারের নির্বাহী আদেশ দুপুরেই কারাগারে পৌঁছায় বলে জেলার নাশির আহমেদ জানান।

একাত্তরের বদর নেতা কাসেমের ফাঁসি কখন কার্যকর হবে সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বা সরকার কিছু না বললেও দুপুরের পর থেকে কাশিমপুর কারাগার কমপ্লেক্সের বাইরের নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়।

জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য মীর কাসেমকে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৪ সালে মৃত্যুদন্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছর আপিল বিভাগও সেই রায় বহাল থাকায় তিনি রিভিউ আবেদন করেন।

আপিল বিভাগ গত মঙ্গলবার রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে কাসেমের মামলার সব বিচারিক প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটে।

তেষট্টি বছর বয়সী মীর কাসেম হলেন ষষ্ঠ যুদ্ধাপরাধী, যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের পর্যায়ে এসেছে।

এর আগে যুদ্ধাপরাধে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।