নারায়ণগঞ্জে অভিযানে ‘নতুন জেএমবি’র শীর্ষনেতা তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হওয়ার পরদিন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম অর্থায়নের বিষয়টি তোলেন।
গুলশান হামলার ‘হোতা’ তামিমকে এক বছর ধরে গোয়েন্দারা খুঁজছিল বলে জানান নারায়ণগঞ্জে অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল।
তিনি বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি যে গত এপ্রিল থেকে তারা পরিকল্পনা করছিল ঢাকায় বড় একটা কিছু ঘটানোর। এ ঘটনার (গুলশান) পেছনে তাদের একটি বিপুল আয়োজন ছিল। অর্থাৎ পরিকল্পনার জন্য তারা লোক বাছাই করেছে, তাদেরকে মোটিভেট করছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
“ট্রেনিং দেওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় (জঙ্গিদের) থাকার ব্যবস্থা করেছে, তাদের সমস্ত দায়-দায়িত্ব তারা পালন করেছে এবং সর্বশেষে সুইসাইডাল হওয়ার মতো অবস্থায় নিয়ে আসতে ব্যাপক সময় লেগেছে।”
“এ প্রক্রিয়ার ভেতরে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিষয় রয়েছে, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে বলে আমরা মনে করি,” বলেন মনিরুল।
গুলশান হামলার নেপথ্যে থাকা অন্তত ৮/৯ জন ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’কে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
অভিযানের পর এসব পাওয়া গিয়েছিল নারায়ণগঞ্জের বাড়িটিতে
তিনি বলেন, শনিবার নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার বাড়িতে অভিযানের ছিক আগ মুহূর্তে জঙ্গিরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিছু আলামত পুড়িয়ে দেয়।
তামিমের সঙ্গে নিহত আরেকজন যশোরের ফজলে রাব্বি বলে শনাক্ত হয়েছে।
অন্যজনের পরিচয় জানা গেছে কি না- জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, “নির্বাচন কমিশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাঠানো হয়েছে, এখনও সেখান থেকে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। তবে ভাসাভাসা যতটুকু জানতে পেরেছি, সে ধানমন্ডি থেকে নিখোঁজ তাওসীফ হাসান।”
এক বছর ধরে তামিমের খোঁজ
কানাডার পাসপোর্টধারী তামিমকে এক বছর ধরে খোঁজা হচ্ছিল বলে জানান মনিরুল।
“পুলিশ গত এক বছর ধরে তামিম চৌধুরীকে খুঁজছিল। তবে জঙ্গি সংক্রান্ত অন্যান্য ঘটনাগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ঠিক কোন পর্যায়ে আগে অতটা বুঝতে না পারলেও গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা অনেকটা নিশ্চিত হই যে সে একটা বড় রুলে আছে।”
তিন জনের লাশ
গুলশান হামলা এবং কল্যাণপুরে অভিযানের পর তামিমের জঙ্গি নেতৃত্বে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল।
তামিম নিহত হওয়ায় জেএমবির তৎপরতা স্তিমিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
“তামিম চৌধুরী যেহেতু নব্য জেএমবির কো-অর্ডিনেটর হিসেব কাজ করেছিল। তার মারা যাওয়ার কারণে এবং কল্যাণপুর অন্তত গুরুত্বপূর্ণ চারজন অর্গানাইজার মারা যাওয়ায় নব্য জেএমবি নিশ্চিহ্ন না হলেও তাদের কার্যক্রম স্তিমিত হবে।”
মারজান আরবি-ইংরেজিতে পারদর্শী
গুলশান হামলার আরেক ‘হোতা’ নুরুল ইসলাম মারজানের সন্ধান এখনও না মিললেও তাকে গ্রেপ্তারে আশাবাদী পুলিশ।
পলাতক এই জঙ্গির সম্পর্কে মনিরুল বলেন, “সে আরবি ভাষায় অত্যন্ত পারদর্শী। মনে হতে পারে সে মাদ্রাসার শিক্ষায় শিক্ষিত, কিন্তু সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করত। সে ইংরেজি ভাষায়ও নাকি দক্ষ।”
দুই ভাষায় পারদর্শী বলে মারজান জেএমবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছি।
গুলশান হামলায় মারজানের কী ভূমিকা ছিল- জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, “তামিম চৌধুরী মূল সমম্বয়ের কাজটা করলেও অপারেশন চলাকালে অর্থাৎ তাদের হত্যাযজ্ঞ চলাকালে তাদের (জঙ্গি) সাথে যোগাযোগ দিক-নির্দেশনা দেওয়া, ছবি তোলা বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে পাঠানো, এসব কাজ মারজান করেছে।”