ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলছেন, শামীম জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আগের নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সামরিক শাখার শীর্ষ চার জন মাসুলের (দায়িত্বশীল ব্যক্তি) একজন।
“প্রকাশনা সংস্থা জাগৃতির কর্ণধার দীপনকে ছাড়াও সাভারের রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শামীম। সে মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে এবিটির আস্তানায় বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।”
মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, মঙ্গলবার রাতে টঙ্গী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বিশেষ অভিযানে’ শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৫ জুন গ্রেপ্তার মো. সুমন হোসেন ওরফে শাকিব ওরফে শিহাব ওরফে সাইফুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশক হত্যায় জড়িত যে ছয়জনকে চিহ্নিত করে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাদের মধ্যে সুমন ও শামীমের নামও ছিল। তাদের নামে পুরস্কারের অংক ছিল ২ লাখ টাকা করে।
বুধবার বিকালে শামীমকে আদালতে হাজির করে দীপন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে বিচারক ছয় দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।
গতবছর অক্টোবরের ৩১ তারিখ বিকালে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেদিনই শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে জঙ্গিরা।
ওই দুই প্রকাশনা থেকেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হয়েছে, যিনি গতবছর ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গি কায়দার হামলায় নিহত হন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল বলেন, “দীপন হত্যার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জিয়ার কথা বলেছে শামীম। এছাড়া দীপনকে হত্যায় কারা তাকে মোটিভেট করেছে, কারা অস্ত্র দিয়েছে, কারা বাড়ি ভাড়া করে দিয়েছে, সেসব তথ্যও পাওয়া গেছে।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দীপন হত্যার এক মাস আগে শামীম ও তার সহযোগীরা মহাখালী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। তার আগে তারা টঙ্গীতে বাসা ভাড়া নিয়ে ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’।
“মূলত অভিজিত রায়ের বই প্রকাশের কারণে দীপনকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় পাঁচজন অংশ নিয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শামীম।”
উপ কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১২ সালে শামীম সিলেটে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তারা তথ্য পেয়েছেন।
“এরপর ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়। সিলেটে যে ব্যক্তি তাকে উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী করে তুলেছিল, তাকেও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।”
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শামীম ওরফে সিফাতের দেশের বাড়ি সুনামগঞ্জ। মদনমোহন কলেজের বিবিএর ছাত্র ছিলেন তিনি। তার এক বড় ভাই যুক্তরাজ্যে থাকেন; সেখানে পালিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তার।
“শামীম দাবি করেছে, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। কোনো অপারেশনে যাওয়ার আগে তারা মোনাজাত পড়ে রওনা হত; তারা ধরেই নিত, অপারেশনে তাদের মৃত্যু হবে। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নিত,” বলেন পুলিশ কর্মকর্তা খালেদ।
পুলিশের সংবাদ ব্রিফিংয়ে মনিরুল বলেন, দীপন হত্যাকাণ্ডে জড়িত আনসারুল্লাহ বা আনসার আল ইসলাম সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন সিফাত ওরফে শামীম।
তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাকে রিমান্ডে পেলে সংগঠনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।”