কিশোরগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধ থেকে আত্মীয় এক আইনজীবীর করা চাঁদাবাজির মামলায় শ্বশুরসহ কারাবন্দি এক রাজমিস্ত্রি, যার জামিনের জন্য আইনি পদক্ষেপও আটকে আছে অপর আইনজীবীদের বাধায়।
Published : 20 Aug 2016, 08:43 PM
বাজিতপুর পৌরসভার রাবারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রশিদ মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বামী ও বাবার এভাবে কারাগারে পড়ে থাকার কথা জানিয়ে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
তিনি জানান, মামলার বাদী জেলা বারের একজন আইনজীবী হওয়ায় সেখানে তিনি কোনো আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেননি। পরে ঢাকা থেকে আইনজীবী নিয়েও স্থানীয় আইনজীবীদের বাধায় মামলা পরিচালনা ছাড়াই তাকে ফিরে আসতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হালিমার পাশে তার দুই নাবালক সন্তানের পাশাপাশি মামলা পরিচালনার জন্য ঢাকা থেকে যাওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামাল হোসেনও ছিলেন।
হালিমা বলেন, তার আত্মীয় অ্যাডভোকেট আমরুল ইসলাম গত ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তার স্বামী রশিদ ও বাবাসহ কয়েকজন আত্মীয়ের নামে একটি ‘মিথ্যা’ চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে বাজিতপুরের সহকারী পুলিশ কমিশনার অভিযোগ তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে তিনি আদালতে এই মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেন।
“পুলিশের ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আইনজীবী আমরুল ইসলাম আদালতে আপত্তি দাখিল করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত দায়ের করা মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট গ্রহণ না করে বিচারের জন্য গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।”
এরপর গত ৬ আগস্ট রাতে পুলিশ হালিমার স্বামী রশিদ মিয়া ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করে। তারা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, মামলাটি পরিচালনার জন্য গত ১৪ অগাস্ট ঢাকা থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামাল হোসেনকে কিশোগঞ্জের আদালতে নিয়ে গেলে তাকে আদালতে কোনো কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ওই সময়ে আইনজীবীরা আদালতে হৈ চৈ করে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করেন। ফলে আদালতে কোনো জামিনের আবেদন করা যায়নি।
এ বিষয়ে আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন, মামলা হলে আইনজীবী নিয়োগ করা একটি মৌলিক অধিকার। বিবাদী পক্ষ কোনো আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে না বলে কিশোরগঞ্জ যে মৌখিক সিন্ধান্ত নিয়েছে তা আইন সম্মত হয়নি।
“এ বিষয়ে আমরা উচ্চতর আদালতে যাব। কিন্তু এই কাজের জন্য মামলার যেসব কাগজপত্র তোলা দরকার সেগুলো স্থানীয় আইনজীবীরা তুলতে দিচ্ছে না।”
তিনি বলেন, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করা না গেলে বাইরে থেকে আইনজীবী নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে নিবন্ধিত একজন আইনজীবী লাগবে। ঘটনার দিন স্থানীয় একজন আইনজীবীকে নিয়োগ দেয়া হলেও মামলাটি যখন আদালতে উপস্থাপিত হয় তখন তাকে আদালতে উপস্থিত হতে দেননি অন্য আইনজীবীরা। তিনি উপস্থিত না থাকায় আদালতে জামিনের বিষয়ে কোনো আবেদন করা সম্ভব হয়নি।
হালিমার অভিযোগ, তার স্বামী রশিদের বাড়ির জমিজমা নিয়ে মামলাটি করা হয়েছে। তাদের ভিটেমাটি দখল করার জন্য আমিরুল ইসলাম একটি ‘গোপন’ দলিল করেছেন।
“বাস্তবে ওই জমি কেউ বিক্রি করেনি। এখন তিনি ওই জমি দখল করার পাঁয়তারা করছেন।”