চার নারী জঙ্গির তদন্তের দায়িত্বে র‌্যাব

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঢাকায় গ্রেপ্তার চার নারীর বিরুদ্ধে করা মামলাটির তদন্ত করবে র‌্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2016, 03:50 PM
Updated : 18 August 2016, 03:50 PM

বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে থাকা ওই নারীদের জঙ্গিযোগ খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার র‌্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লুৎফুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই নারীদের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলাটির তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল র‌্যাব।”

চারজনকে বৃহস্পতিবারই মিরপুরে র‌্যাব-৪ এর কার্যালয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি।

মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী আকলিমা রহমান, মৌ ও মেঘনা এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ঐশীকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সামনে আনে র‌্যাব।

র‌্যাব-৪ এর সিপিসি ১ এর অধিনায়ক মেজর সাইদ বলছেন, এদের মধ্যে আকলিমা জেএমবির নারী বিভাগের উপদেষ্টা, অন্যরা তার সহযোগী।

পুলিশি আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার ওই চার নারীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ‌্যের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তা লুৎফুল বলেন,“ওই নারীরা ইন্টারনেট থেকে  আইএসের বিভিন্ন অডিও ও ভিডিও সংগ্রহ করতেন। তবে তাদের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ হয়েছে এই নিয়ে এখনও কোন ধরনের তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ”

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলা এবং কল‌্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত নয় জঙ্গির সঙ্গে এদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খতিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

“মামলার তদন্তকে একটি পরিপূর্ণ রূপ দিতে তাদের ওই ঘটনাগুলোতে কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সেটি তদন্ত করে দেখা হবে,” বলেন তিনি।

ওই চার নারী তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর ১০ নারীর নাম বলেছেন বলে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শাহজালাল আলম জানিয়েছেন।

এরা হলেন- সাফিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, মাইমুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, তাসনুবা ওরফে তাহিরা, সায়লা ওরফে শাহিদা, সালেহা ওরফে পুতুল, দিনাত জাহান ওরফে নওমী ওরফে বানী, তানজিলা ওরফে মুন্নী, আলিয়া ওরফে তিন্নি ওরফে তিতলী, মনিরা জাহান ওরফে মিলি ও ছাবিহা ওরফে মিতু।

গ্রেপ্তাররা নাম বললেও তাদের বিস্তারিত পরিচয়সম্পর্কে ‘তেমন কিছু’ বলছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত ২১ জুলাই টঙ্গীতে গ্রেপ্তার জেএমবির ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় আমীর’ মো. মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানের (২৭) দেওয়া তথ‌্যের ভিত্তিতে এই নারীদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান।

লুৎফুল কবির মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে তারা জানতে পারেন, আকলিমা রহমান নামে জেএমবির এক নারী সদস্য রমজান মাসে ১২ হাজার টাকার তহবিল সংগ্রহ করে দিয়েছেন। এরপর তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে নেওয়া হয়।

“বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি আকলিমা আরবি শিক্ষার কথা বলে বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করতেন। তার সঙ্গে অনেকেই সাক্ষাৎ করতেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

এরপর আকলিমার দেওয়া তথ‌্যের ভিত্তিতে মগবাজার এলাকা থেকে ঐশী এবং মিরপুর-১ এর জনতা হাউজিং থেকে মৌ ও মেঘনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আকলিমা রহমান

ঢাকার রেনেসাঁ প্রি-ক্যাডেট হাই স্কুল ও সাইনবোর্ড এলাকার হাজী আহাম্মদ আলী পাবলিক স্কুলে প্রাথমিকের পর উত্তরা হাই স্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন আকলিমা।

এরপর হলি চাইল্ড স্কুল অ‌্যান্ড কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ২০১৩ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া এই তরুণী পড়ছিলেন ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে।

ঐশী

চিকিৎসক বাবা মায়ের সন্তান ঐশী ২০১০ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। চলতি বছর জানুয়ারিতে এমবিবিএস শেষ করে জুনে তিনি ইন্টার্নশিপ শুরু করেন।

ঐশীর বাবা ডা. বিশ্বাস আক্তার হোসেন (৫৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। আর মা ডা. নাসিমা সুলতানা (৪৮) আছেন সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে।

মৌ

মিরপুর-২ এর ইসলামিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি ও মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন মৌ। মেডিকেল ও ইউনিভার্সিটি ভর্তির জন্য তিনি ইউসিসির ফার্মগেইট শাখায় কোচিং করেন। পরে ২০১৩ সালে ভর্তি হন মানারত ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগে।

মেঘনা

ঢাকার আহম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ঢাকা ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন মেঘনা। ওই বছরই পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তিনি।

এর আগে গত জুলাই মাসে সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল থেকে জেএমবির সাত নারী সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল অস্ত্র, বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম এবং উগ্র মতবাদের বই।

টাঙ্গাইলে গ্রেপ্তার তিনজন জেএমবির আত্মঘাতী দলের সদস্য বলেও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।