সোমবার সন্ধ্যায় পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রাম থেকে নিজাম উদ্দিনকে আটক করা হয় বলে তার স্বজনরা জানান। তবে এবিষয়ে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা মুখ খোলেননি।
নিজামের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার ভাই নুরুল ইসলাম মারজান আট মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
“আমার ভাই অনেক ভাল ছাত্র ছিল, তাকে কারা জঙ্গি বানাল, আমরা তাদের বিচার চাই। তবে আমার ভাইও যদি এই ঘটনার (গুলশান হামলা) সঙ্গে জড়িত থাকে, আমার ভাইয়েরও বিচার হোক।”
মারজানের গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ রানা ও সাগর হোসেন রনি জানান, নিজামকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিতে দেখেছেন তারা।
নিজামকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা ডিবি পুলিশের ওসি জাহাঙ্গীর আলম কিছু বলতে রাজি হননি।
পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন সংস্থা আছে, কারা আসলে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে, আমাদেরও জানা নেই।”
গুলশানে গত ১ জুলাই ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনায় সন্ত্রাস সমন আইনে করা মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
হলি আর্টিজানে হামলার প্রায় দেড় মাস পর গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ওই ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ মারজানের নাম প্রকাশ করেন।
সোমবার আটকের আগে নিজাম সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকায় ছবি প্রকাশের পর তিনি ছেলের বর্তমান অবস্থার কথা জানতে পারেন। এর আগ পর্যন্ত তিনিসহ পরিবারের লোকজন কেউ কিছু জানতেন না।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোসিয়ারি শ্রমিক নিজামের ১০ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মারজান আর্থিক অনটনের মধ্যেই বেড়ে ওঠেন।
আফুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে তিনি পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল ও আলিম পাস করেন।
এর পর মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভর্তি হন বলে তার স্বজনরা জানান।
নিজাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বাড়ির সঙ্গে মারজানের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু বছর খানেক আগে বিয়ে করার পর যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।
মারজানের এই ছবিটি দিয়েছে পুলিশ
ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে কষ্টের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “খুব কষ্ট করে তাকে পড়াশুনা করাতাম।
“আলিম পাস করার পর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। ভালো ছাত্র হওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। আমি বলেছিলাম টাকা তো নেই, কী করে তোমারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াব। সে বলেছিল, কয়েক মাস চালালে আমি প্রাইভেট ঠিক করে নিব।”
“ভর্তির প্রথম প্রথম ভালোই যোগাযোগ ছিল, বেশ কিছু দিন ধরে সে যোগাযোগ করত না। আমাদের ধারণা ছিল, বিয়ে করার কারণেই হয়ত আমাদের এখানে আসে না।”
একই গ্রামের বাসিন্দা রানা ও সাগর বলেন, তারা স্কুলে মারজানের সঙ্গেই পড়তেন। জঙ্গি মনোভাব কখনও তাদের চোখে পড়েনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে যোগাযোগ কমে যায়।
সোমবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, মারজানের পুরো নাম নুরুল ইসলাম এবং তার পাবনায় বলে তারা জানতে পেরেছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী বলেও তারা তথ্য পেয়েছেন।
এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।
“তবে পুলিশকে আমাদের দেওয়া অনুপস্থিত ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে নুরুল ইসলামের নাম ছিল না। আর অনুপস্থিত ছয় শিক্ষার্থীর সবার খোঁজ পাওয়া গেছে।”
নুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।