“গ্যাসটা এত মূল্যবান সম্পদ যে এটা দিয়ে ভাত-তরকারি রান্নার কোনো মানে হয় না,” বলেছেন তিনি।
সরকার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে গৃহস্থালিতে গ্যাস ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে। বাসা-বাড়িতে পাইপলাইনের গ্যাস সংযোগ আর না দেওয়ার পাশাপাশি সিলিন্ডারে এলপিজি আমদানি উৎসাহিত করছে।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেট্রো সেন্টারে জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী পাইপলাইনে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলএনজি আমদানি করার কথা বলেন।
গৃহস্থালিতে গ্যাস সংযোগ আর না রাখার সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যারা বলে আসছেন, তাদের হতাশও করেন মুহিত।
“এ নিয়ে আন্দোলন করে কোনো লাভ হবে না। চিৎকার করে কোনো লাভ হবে না। এটা কোনোভাবেই হবে না, একদম বাদ দিতে হবে।”
বাংলাদেশে উৎপাদিত গ্যাসের ১২ শতাংশ ব্যবহার হয় গৃহস্থালিতে রান্নার কাজে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে ২০০৯ সাল থেকে গৃহস্থালিতে নতুন আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না বললেই চলে।
বর্তমানে দেশে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের দেশে প্রচুর গ্যাস রয়েছে। তাই ডমেস্টিক কনজাম্পশনে (গৃহস্থালিতে ব্যবহার) গ্যাস সরবরাহ করেছিলাম।
“এখন আমরা যা দেখছি, আমাদের কাছে গ্যাস যা আছে, তা একেবারেই যৎসামান্য। এটা এত মূল্যবান যে, এটা দিয়ে ভাত, ডাল রান্না করা একেবারেই অপচয়। এটা আমাদের নিজেদের বোঝা উচিৎ, অন্যদের বোঝানো উচিৎ যে, রান্না-বান্নায় গ্যাসের ব্যবহার চলবে না।”
বিকল্প হিসেবে এলএনজি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানালেও এক্ষেত্রে সাধারণ ক্রেতারা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন বলে স্বীকার করেন মুহিত।
এ সমস্যা দূর করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
“বিকল্প আছে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি... উৎপাদনের জন্য আমি যথেষ্ট সুযোগও দিয়েছি এই ইন্ডাস্ট্রিকে। সুযোগ কেউ কেউ নিয়েছেন কিন্তু তারা আবার খুব অন্যায় কাজ করছেন। তারা খোলাখুলি স্টাইলে কাজ করতে চাচ্ছেন। পুরো ব্যাপারটাকে মনোপলির জায়গায় নিয়ে গেছেন।
“আমরা সিলিন্ডার আমদানি আরও সহজ করে দেব, যাতে করে যারা ডোমেস্টিক পারপাসে সিলিন্ডার ব্যাবহার করেন, তারা যেন ভোগান্তির শিকার না হন।”
এলএনজি আমদানি কাজ আরও জোরদারের কথাও বলেন মুহিত।
গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টিতেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “আগামী ২ বছরের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন হবে। এক্ষেত্রে আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ অর্থ। একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরপত্তা গড়ে তুলতে আমাদের প্রয়োজন ১৫ বিলিয়ন ডলার।
“এই অর্থ জোগাড়ে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো মার্কেটে নিয়ে যাওয়া, ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল বন্ড ছাড়া ইত্যাদি পরিকল্পনা আমাদের আছে।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির উপদেষ্টা তাজুল ইসলামও ছিলেন।