কল‌্যাণপুরের ‘ঘাটতি মেটাতে’ নতুন জঙ্গি আমদানি

ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির পাঁচ সদস্যকে বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলেছে, কল্যাণপুরে ‘লোকবল ক্ষয়ের ঘাটতি মেটাতে’ তাদের উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানীতে আনা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2016, 07:09 AM
Updated : 12 August 2016, 07:29 AM

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মো. ইউসুফ আলী জানান, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট বৃহস্পতিবার রাতে টেকনিক্যাল মোড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।

এরা হলেন- আতিকুর রহমান আতিক, আবদুল করিম বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ, মো. মতিউর রহমান ও শাহীনুর রহমান হিমেল।

তাদের কাছে ৮৭৫ গ্রাম জেল বিস্ফোরক ও ২৫টি ডেটোনেটর পাওয়া গেছে বলে পুলিশের ভাষ্য।

শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অভিযানের সময় পাঁচজনকে ধরা গেলেও  আরও চারজন পালিয়ে যায়। তাদের নাম নান্নু, সজীব, ইমরান ও জিপসি বলে গ্রেপ্তাররা পুলিশকে বলেছে।

মনিরুল বলেন, “কল্যাণপুরের ঘটনায় নয়জন নিহত হওয়ার পর ঢাকায় জেএমবির কর্মী সঙ্কট দেখা দেয়। তাই এদেরকে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় আনা হয়। মূলত প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করতে তাদের ঢাকায় আনা হয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে।”

আটক পাঁচজনের নাম নিখোঁজদের তালিকায় ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কয়েক মাস আগে তারা গৃহত্যাগ করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে। আমারা তাদের দেওয়া ঠিকানা পেয়ে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হতে পারব।”

২০০৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সরকার জেএমবির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে ওই বছর ১৭ অগাস্ট ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা ফাটিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় সংগঠনটি। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টানা অভিযানে দলটি দুর্বল হয়ে গেলেও গত দুই বছরে তারা নতুন করে সংগঠিত হয়ে একের পর এক হত্যা-হামলা চালাচ্ছে বলে পুলিশের ভাষ্য।

নতুন করে সংগঠিত এই জেএমবিকেই নিও জেএমবি বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে এবং ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার জন্যও ওই দলের সদস্যদের দায়ী করছেন তারা।     

গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর গত ২৬ জুলাই এই কল্যাণপুরেই এক বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হন। তারাও জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

এদের ‘নিও জেএমবি’ কেন বলা হচ্ছে- এ প্রশ্নে মনিরুল বলেন, “গত এক বছর ধরে আমাদের ব্রিফিং যদি ফলো করেন, তাহলে দেখবেন আমরা বলে আসছি যে জেএমবি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। তারা মাওলানা সাইদুর রহমানের জেএমবিতে অনুপ্রবেশ করলেও এখান থেকে একটি গ্রুপ বের হয়ে যায়। ওই গ্রুপটিই নিও জেএমবি।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গুলশানের ঘটনার পর কল্যাণপুর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানের অন্তত দশটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। গুলশান ঘটনার দিন জঙ্গিরা ভেতর থেকে বাইরে যে ছবি ও মেসেজ পাঠিয়েছিল, তা মারজান (সাংগঠনিক নাম) নামের এক তরুণ ছড়িয়ে দেয় বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

“সে ঢাকায় অবস্থান করছে। সে শিক্ষিত ছেলে বলে মনে হয়েছে। তার একটি ছবি গোয়েন্দা সদস্যদের হাতে রয়েছে।”

যে দুজনকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডের হোতা বলে আসছে পুলিশ, সেই তামিম চৌধুরী ও মো. জিয়াউল হক ঢাকাতেই অবস্থান করছেন বলে ধারণা করছেন মনিরুল।  

“আমাদের ধারণা, তারা ঢাকাতেই আছেন। আমরাও চেষ্টা করছি এবং অন্য সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও হয়েছে।”

এদের মধ্যে বরখাস্ত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হককে ২০১২ সালে সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনাকারী বলছে পুলিশ। তিনি জঙ্গি দল আনসার আল ইসলামের হয়ে কাজ করছেন বলে এর আগে মনিরুল রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন। 

আর কানাডীয় পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিক তামিম চৌধুরীকে ‘আইএস এর বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক’ বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে।

তাদের দুজনকে সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ড ও হামলার হোতা হিসেবে চিহ্নিত করে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।