হাতে গাছের শাখা প্রশাখার মতো আঁচিল নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন আবুল বাজানদার; কিন্তু চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ হয়ে এখন নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
Published : 09 Aug 2016, 09:47 PM
বিরল ‘এপিডারমোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ কেজি ওজনের আঁচিল নিয়ে সবার কাছে ‘বৃক্ষমানব’ নাম পেয়েছিলেন খুলনার ২৫ বছর বয়সী এই যুবক।
গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পর সরকারি খরচে চিকিৎসা চলে বাজানদারের। নয়বার অস্ত্রোপচারের পর তার দুই হাতের ১০ কেজি আঁচিলের কিছুই এখন নেই; পায়ের অবস্থাও তাই।
মঙ্গলবার নিজের ভারমুক্ত হাত-পা দেখিয়ে বাজানদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেই, সেই আঁচিল নেই। কোনো ওজন নেই। এত ভার ছিল, এখন খুবই হালকা লাগছে।”
হাসপাতালে এখন চিকিৎসকদের পরামর্শে ব্যয়াম করার চেষ্টা চালাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “চেষ্টা করি, তবে আঙুলগুলো ভাঙতে পারছি না। তবে হালকা বাঁকানো যায়।”
কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে ভ্যান চালিয়ে সংসারের ঘানি টানছিলেন, মাঝে এই রোগে ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। এখন ব্যবসায়ী হওয়া স্বপ্ন দেখছেন বাজানদার।
“সুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়িতে চালের ব্যবসা করব,” বলেন তিনি।
চালের ব্যবসা কেন- জানতে চাইলে এই যুবক বলেন, “আমাদের ওখানে চালের ব্যবসাটা ভালো ব্যবসা।”
সরকারি খরচে চিকিৎসার পর বাড়ি ও চাষাবাদের জন্য জমি কিনতে এক চিকিৎসকের কাছ থেকে টাকাও ইতোমধ্যে পেয়েছেন বাজানদার।
বাড়ি ফিরে উপার্জনের অর্থে নিজের ছোট্ট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তাহেরাকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্নও দেখছেন তিনি।
“আমি চিকিৎসার জন্য এত ভোগান্তিতে পড়েছি। তাই মেয়েকে ডাক্তার বানাব।”
হাসপাতালের বিছানায় বসে বসে টেলিভিশন দেখতে দেখতে বাজানদারের সঙ্গে কথা বলার সময় মেয়ে তাহেরা নিচে ঘুমাচ্ছিল। তার স্ত্রী হালিমা খাতুনও ছিলেন পাশে।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী এই টেলিভিশনটি দিয়েছেন বাজানদারকে।
বাজানদারের অবস্থা জানতে চাইলে বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে এখন অনেকটা সুস্থ।”
বাজানদারকে আরও তিন থেকে চার মাস হাসপাতালে থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাকে ব্যয়াম করতে বলা হয়েছে। এক ধরনের মলম দুই হাতের ত্বকে লাগানো হচ্ছে। পায়ের ব্যান্ডেজ পরে খোলা হবে।”