হাতিটি উদ্ধারে ৩ কৌশল ব‌্যর্থ

বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ দল টানা পেছন পেছন ছুটেও উদ্ধার করতে পারেনি আসাম থেকে বানের জলে ভেসে আসা বুনো হাতিটিকে।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2016, 02:30 PM
Updated : 16 August 2016, 09:54 AM

পোষা হাতি দিয়ে আহ্বান, খাবারের প্রলোভন ও তাড়িয়ে আনার কৌশলেও কাজ হয়নি। এখন খুলনা থেকে ‘ক্যাপচার পাওয়ার প্রজেক্ট’ বন্দুক আনা হয়েছে।

অন্তত ৩০ মিটার দূর থেকে চেতনানাশক বিশেষ এই বন্দুক ব্যবহার করে সুকৌশলে হাতিটি উদ্ধারের প্রস্তুতি চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বন অধিদপ্তরের সাবেক উপ প্রধান বন সংরক্ষক তপন কুমার দে রোববার সন্ধ‌্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বেশ ক’দিন চেষ্টা করলাম হাতিটি উদ্ধারে। পোষা হাতি দিয়েও শুকনো জায়গায় উঠাতে পারলাম না; এখন ভারতীয় দলকে নিয়ে ঢাকায় ফিরছি।

“তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নিয়ে কাল (সোমবার) প্রধান বন সংরক্ষকের সঙ্গে মিটিং করব। তারা (ভারতীয় প্রতিনিধি দল) এ নিয়ে আসামে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগে প্রতিবেদন দেবে।”

হাতিটি উদ্ধার করা হলেও আপাতত ভারতে পাঠানো হচ্ছে না। সুবিধাজনক সময়ে উদ্ধারের পর শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে সাফারি পার্কে এর জায়গা হতে পারে।

দুর্বলতা কেটে গেলে শেরপুরের গজনীতে হাতির আবাস্থলে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানান বন কর্মকর্তারা। তাতে ভারত থেকে প্রায় হাতিদের দলে ভিড়ে এটিও চাইলেই নিজের আবাসে ফিরতে পারে।

গত ২৬ জুন থেকে বানের জলে ভেসে আসা বুনোহাতিটি বাংলাদেশের পাঁচ-ছয় জেলার প্লাবিত এলাকায় ঘোরাফেরার পর এখন জামালপুরে অবস্থান নিয়ে আছে।

বন অধিদপ্তরের একটি দল এর গতিবিধি অনুসরণ করে আসছিল। হাতিটি উদ্ধারে ৩ অগাস্ট যোগ দেন আসামের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলটি।

যৌথ দলে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ তপন দে বলেন, “হাতিটি নেওয়ার জন্য ভারতীয় দলটি আসেনি; তারা এসেছে উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে।

“হাতিটিকে ভারতে নেওয়া সহজ নয়, তারা নেবেও না। সিদ্ধান্ত হয়েছে-আমাদের লোকজন তাকে উদ্ধার করে শেরপুরের গজনী বা জামালপুরের সীমান্ত এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হবে। ভারতের অনেক হাতির চলাফেরা রয়েছে ওই এলাকায়; চাইলে তাদের সঙ্গেও চলে যাবে এটি।”

হাতি উদ্ধারে থাকা ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোবিন্দ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাজার হাজার উৎসাহী মানুষের ভিড় ও বানের অথৈ পানিতে উদ্ধারের কাজ করা যাচ্ছে না। এ জন্য পানি কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

উদ্ধারের জন‌্য তিন ধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পোষা হাতি দেখিয়ে শুকনো জায়গায় নেওয়ার ফাঁদ করা হয়েছিল; খাবার দেখিয়ে পছন্দসই এলাকায় নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং পারদর্শিতা দিয়ে অন্যদিকে খোলা এলাকায় ‘ড্রাইভ’ করানোর চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

“এত লোকের ভিড়ে ওপেন স্পেস পাওয়া দুষ্কর। আর এত পানি। কাছাকাছি যাওয়াও মুশকিল। পশু চিকিৎসকসহ আমাদের অভিজ্ঞ দল রয়েছে; বানের পানি কমে গেলে ট্রাঙ্কুলাইজ করেই তাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

নতুনভাবে উদ্ধার কাজের জন্য খুলনা থেকে বিশেষ বন্দুকও আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রোববার সন্ধ্যায় মাদারগঞ্জের হরিরামচরে ছিল হাতিটি।

টানা পাঁচ দিনের যৌথ উদ্ধার তৎপরতার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে হাতিটির আচরণের বিশদ তুলে ধরেন চিকিৎসক সৈয়দ হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাতিটি পুরোপুরি বন্য। এতদিন বানের জলে ঘোরাঘুরিতে দুর্বল হলেও পোষা হাতির সঙ্গও সহ্য করতে পারছে না।

“পোষা হাতিটিকেও তাড়া দিয়েছে; আমি পোষা হাতিটির পিঠে ট্রাঙ্কুলাইজার বন্দুক নিয়ে বসেছিলাম। মানুষের ভিড়ে পুরো উদ্ধার কাজই ঝুঁকিতে রয়েছে। নেই শুকনো জায়গা; আমাদের নতুন কৌশল নিতে হচ্ছে।”

এ কর্মকর্তা জানান, সুন্দরবন থেকে চেতনানাশক বিশেষ বন্দুক আনা হয়েছে; যাতে দূর থেকেও অচেতন করা যায় হাতিটিকে। ক্রেইন-ট্রাক দ্রুততম সময়ে আনা হবে।

আগের ট্রাঙ্কুলাইজার বন্দুকে প্লাস্টিক ডার্ট ব্যবহার করা হত; এটা খুব কাছাকাছি গিয়ে ছুড়তে হয়।

“এখন আনা হয়েছে প্রায় ৩০ মিটার দূর থেকে ছোড়া যায় এমন বন্দুক, যাতে মেটাল ডার্টের মাধ্যমেই হাতিটিকে ট্রাঙ্কুলাইজড করা যাবে,” বলেন এই পশু চিকিৎসক।