তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পনায় যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
কখনো সাঁতরে, কখনো হেঁটে প্রায় এক মাসে শত কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়া হাতিটির বর্তমান অবস্থান জামালপুরে।
ঝালুপাড়া গ্রাম থেকে মাত্র পাঁচশ মিটারের মধ্যে সে ঘুরোঘুরি করছে।
‘নিরুদ্দেশ যাত্রায়’ থাকা এই ভারতীয় হাতি উদ্ধারে সেদেশ থেকে প্রতিনিধিদল আসতে এক মাসের বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হলেও সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েই এগিয়েছে বাংলাদেশের বন বিভাগ।
পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে সেটাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার। লোকালয়ের খুব কাছাকাছি অবস্থান নেওয়া হাতিটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে বন অধিদপ্তরের ১৭ জনের এই দল।
হাতি উদ্ধারকারী দলে থাকা ভেটেরিনারি চিকিৎসক সৈয়দ হোসেন জানান, ঝালুপাড়া গ্রামের পাশেই প্রধান সড়ক রয়েছে, পাশে একটি মাঠও রয়েছে। হাতিটিকে মাঠের দিকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
দলে রয়েছে অচেতন করার ট্রাঙ্কুলাইজার বন্দুক, প্রশিক্ষিত মাহুত, পরিদর্শকসহ অনেকে। স্থানীয় পুলিশ লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নেবে।
“যদি পারা যায়-হাতিটিকে ডাঙ্গায় তোলা হবে বা মাঠের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। বড় ট্রাক চলাচলের মতো রাস্তা রয়েছে; বড় ক্রেনে করে হাতিকে ট্রাকে তোলাও যাবে। এর আগেই ট্রাঙ্কুলাইজড করা হবে হাতিটিকে। যাতে করে ঘণ্টাদুয়েকের মতো অজ্ঞান থাকবে সে।”
তিনি জানান, এসময় আশাপাশের রাস্তায় অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
বুধবার বিকালের মধ্যে আসাম থেকে বন কর্মকর্তা, হাতি বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত মাহুতসহ একটি দল পৌঁছাবে। তাদের সঙ্গে বৈঠক করেই হাতিটি কীভাবে ও কোথায় নেওয়া হবে সে কর্মপরিকল্পনা বিনিময় করবে দুইপক্ষ।
সৈয়দ হোসেন জানান, হাতিটি ভারতের হওয়ায় জামালপুর থেকে সরাসরি সীমান্ত এলাকায় নেওয়াও হতে পারে। দেশে রাখার সম্মতি পেলে নতুন করে ভাবতে হবে। সেক্ষেত্রে গাজীপুরের সাফারি পার্কেই হতে পারে রাখার জন্যে উপযুক্ত জায়গা।
হাতি দেখতে হাজারো মানুষ
এরই মধ্যে এই অনাবাসী হাতি পরিণত হয়েছে হাজারো মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
মঙ্গলবারও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতে দেখা গেছে শত শত মানুষকে। কেউ আসছেন নৌকা ভাড়া করে, কেউবা পানি ভেঙে। মানুষের এমন ‘উৎসাহ’ সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে পাহারায় থাকা বনকর্মীদেরও।
গত ২৭ জুন বাংলাদেশ সীমান্তে ঢোকার পর হাতিটি কুড়িগ্রামের রৌমারিতে ছিল ৯ জুলাই পর্যন্ত। এরপর গাইবান্ধায় ১০ থেকে ১৩ জুলাই, জামালপুরে ১৪-১৬ জুলাই, বগুড়ায় ১৭-১৮ জুলাই, সিরাজগঞ্জে ১৯-৩০ জুলাই এবং তারপর ৩১ জুলাই থেকে জামালপুরে তার অবস্থান।
নদীপথে আসার সময় বেশিরভাগ সময় চর এলাকায় অবস্থান করেছে সে।
সৈয়দ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বানের জলে ভাসছে আশপাশ। বুনো হাতিটি অসহায় হয়ে লোকালয়েও আসতে পারছে না। সে বিস্তীর্ণ সবুজ ঝোঁপ-ঝাড়ে ঘোরাঘুরি করছে।
“তবুও তাকে ছাড়ছে না উৎসুক মানুষ। আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত মানুষ নৌকা ভাড়া নিয়ে এসে এক নজর দেখে যাচ্ছে তাকে।”
সরিষাবাড়ী উপজেলার ঝালুপাড়ার গ্রামে হাতিটির বর্তমান অবস্থান।
মঙ্গলবারই পালা করে তার দর্শনার্থীর সংখ্যা কম করে হলেও হাজার খানেক হতে পারে বলে ধারণা করছেন এই চিকিৎসক।
“আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে সার্বিক বিষয় অবহিত করেছি। এভাবে হাতিকে বিরক্ত করলে যে কোনো সময় আক্রমণও করে বসতে পারে। আশপাশের লোকজন ঠেকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশের দল এলাকা পরিদর্শন করে যাওয়ার কথা রয়েছে।”
বিকাল ৫টায় এই চিকিৎসক তার ফেইসবুকে ইংরেজিতে স্ট্যাটাস দেন: “হাজারো নারী, পুরুষ, শিশু হাতিটিকে ঘিরে রেখেছে। ভয়াবহ!”
হাতি উদ্ধারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “লোকালয়ের ৫০০ মিটারের কাছাকাছি ধীরে চলাফেরা করছে প্রায় পাঁচ টন ওজনের বন্যপ্রাণীটি। প্রতিদিন গড়ে ৫০ কেজিরও বেশি খাবারের দরকার পড়ে তার।”
খাবার সংকটে ক্রমশঃ দুর্বল হতে থাকা হাতিটি মঙ্গলবার সকাল থেকে ভালো খাবার পাচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সৈয়দ হোসেন বলেন, “এখন আমরা অপেক্ষায় রয়েছি ভারতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ দলের। তাদের পেলেই যৌথভাবে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। বুধবার দলটি আসবে। পারলে বুধবারই হাতিকে সরাবো, নতুবা পরদিনই পরিকল্পনা মতো কাজ সেরে ফেলব।”